এক দিকে পৌষমাসের ডাক, অন্য দিকে সর্বনাশের আশঙ্কা। ফাল্গুনের বৃষ্টিতে এমনই পরিস্থিতি চাষে। পরপর দু’দিনের বৃষ্টিতে বোরো চাষে সুবিধে হবে বলে মনে করছেন চাষি ও কৃষি আধিকারিকেরা। কিন্তু, ভাঁজ পড়েছে আলু, পেঁয়াজ ও আনাজ চাষিদের কপালে। সোমবার গভীর রাতে শিলাবৃষ্টির জেরে সর্ষে চাষেও ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলা কৃষি দফতরের কর্তারা।
এই দফায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে কৃষি অধ্যুষিত কালনায়। কৃষি দফতরের হিসাবে, সোমবার রাতে সেখানে প্রায় ৮২.৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বর্ধমান, মেমারি, মন্তেশ্বরেও ভাল বৃষ্টি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিও হয়েছে এই সব এলাকায়। জেলায় গড় বৃষ্টিপাত ২৫.৪ মিলিমিটার। আলু, পেঁয়াজ, আনাজের খেতে জল জমে গিয়েছে। মঙ্গলবার বৃষ্টি কমার পরে জমি থেকে জল বার করতে নেমে পড়েন চাষিরা।
জেলার শীতকালীন অর্থনীতি অনেকটা নির্ভরশীল আলু চাষের উপরে। কৃষি দফতরের হিসাবে, জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। ফলন মেলে প্রায় ২১ লক্ষ টন। কালনার আলু চাষি প্রদ্যুত মণ্ডলের কথায়, ‘‘একে লাভজনক দর নেই, তার উপরে জমি থেকে তোলার আগেই বেশির ভাগ আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’ হাটকালনা এলাকার পেঁয়াজ চাষি মনিরুল শেখ বলেন, ‘‘৪০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৬০ টাকায়। এর পরে জমিতে যা জল জমেছে, তাতে বেশিরভাগ পেঁয়াজই নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ দমকা হাওয়া ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে বহু পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে তাঁদের দাবি। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘জল বের করে দিতে পারলে আলু বা পেঁয়াজে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।’’
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের আনাজ চাষিদের দাবি, চাষে জল লাগে কম। এই বৃষ্টিতে বেশির ভাগ জমিতে জল জমে গিয়েছে। ফলে, গোড়া পচা রোগে গাছ নষ্টের সম্ভাবনা থাকছে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এ বার জেলায় প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বেড়ে সর্ষে চাষ হয়েছে প্রায় ৩৭,৮৫০ হেক্টর জমিতে। দফতরের দাবি, শিলাবৃষ্টি হয়েছে এমন জায়গায় সর্ষের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। জগন্নাথবাবুর কথায়, ‘‘কতটা ক্ষতি হয়েছে, হিসেব কষছেন ব্লকের আধিকারিকরা।’’
তবে বৃষ্টিতে খানিক স্বস্তিতে বোরো ধান চাষিরা। কৃষি আধিকারিক জগন্নাথবাবু জানান, এ বার সেচের জল মিলবে না বলে কৃষি দফতর বোরো চাষে উৎসাহ দেয়নি। তার বদলে ডাল-তৈলবীজ চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়। সে জন্য জেলায় এ বার বোরোর এলাকা কমবে বলে কৃষি দফতর রিপোর্ট দিয়েছে। কিন্তু আচমকা বৃষ্টির জন্য বোরো চাষে উৎসাহ পাবেন চাষিরা। সাধারণত এই জেলায় বোরো চাষ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। গত বছর এই সময়ে বোরো চাষ হয়েছিল প্রায় ১ লক্ষ ৮ হাজার হেক্টরে। সেখানে মঙ্গলবার পর্যন্ত বোরো চাষ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে। জগন্নাথবাবু বলেন, ‘‘এই বৃষ্টির পরে অনেকেই চাষ করবেন। আমার ধারণা, এ বার এক লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে।’’
বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে আম, লিচুর মতো বিভিন্ন ফলের চাষেও। জেলার সহ-কৃষি আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন বৃষ্টির অভাবে জলস্তর নামতে শুরু করেছিল। এখন তা অনেকটা বাড়বে। এই সময়ে আম, লিচু গাছে মুকুল রয়েছে। ভাল বৃষ্টিতে মুকুল শক্ত হবে।’’