ক্রেতা, বিক্রেতার ভিড়ে জমে উঠেছে রানিগঞ্জ বাজার। বুধবার। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
গোলমালের পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা দিন। জোট বেঁধেছেন মানুষও। আর তার পরেই ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে রানিগঞ্জ।
গোলমালের সময়ে দুষ্কৃতীরা আগুন ধরিয়ে দেয় শহরের হাটতলার বেশ কিছু দোকানে। আনাজের জোগান স্বাভাবিক না থাকায় দরও বেড়েছিল খানিকটা। তবে বুধবার শহরের হাটতলায় গিয়ে জানা গেল, বেলুনিয়া, নূপুর ও বাঁকুড়ার নানা গ্রাম থেকে আনাজ বিক্রেতারা ফের আসতে শুরু করেছেন শহরে। তবে আনাজ বিক্রেতা মহম্মদ মুবারক ও বাপ্পা দত্তের আক্ষেপ, ‘‘দুষ্কৃতীদের আগুনে পুড়ে যায় বিদ্যুতের তার। ফলে আলো না জ্বলায় সন্ধ্যায় ক্রেতার দেখা মিলছে না।’’ সকালে অবশ্য থলি হাতে দেখা গিয়েছে শহরের নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের।
একই রকম ভিড় রানিগঞ্জ বড়বাজারেও। এখানেও গোলমালের সময়ে ক্ষতি হয়েছিল কিছু দোকানে। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, আখতার ইসলাম, ইফতেকার আহমদের জুতোর দোকান সারাইয়ের কাজে তদারকি করছেন পোশাক বিক্রেতা সজন খেতান।
গত কয়েক দিন বাস পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকলেও এ দিন দেখা গিয়েছে শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্ত থেকে বাস ঢুকছে। বাস চলাচল শুরু হয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকেও। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘রানিগঞ্জ হয়ে মোট ১৮২টি বাস চলাচল করছে। কোথাও সমস্যা নেই। মঙ্গলবার থেকে যাত্রী সংখ্যাও প্রায় স্বাভাবিক।’’ তবে এখনও মুর্শিদাবাদ, মালদহ-সহ ভিন্-জেলার রাজমিস্ত্রিরা তেমন ভাবে না ফেরায় বিক্রিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান নির্মাণ সামগ্রী বিক্রেতা অসীম সেন।
৪ এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি রানিগঞ্জে। তবে গত দু-তিন দিন ধরে ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড় দেখা যাচ্ছে বলে জানান রানিগঞ্জ কো-অপারেটিভ চেয়ারম্যান গোপাল আচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘গোলমালের জেরে ৩১ মার্চের মধ্যে অনেকেই ঋণের বকেয়া কিস্তি দিতে পারেননি। তবে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’’
এই পরিস্থিতিটাই যে স্বাভাবিক তা মনে করিয়ে দিলেন রানিগঞ্জ গার্লস কলেজের কর্মী হোসেননগরের কৌশর পরভিন ও সিহারসোলের পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। টিফিন ভাগ করে খেতে খেতে তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের শহরে আর কখনও গোলমাল বাধবে না।’’
রানিগঞ্জের বিধায়ক রুনু দত্ত বলেন, “প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে রাজ্য সরকারকে। পুরসভা ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। তা যথেষ্ট নয়। আরও যাতে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তার জন্য রাজ্যপাল, রাজ্য সরকার এবং জেলাশাসকের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’