দুই নেতার ‘দ্বন্দ্ব’ মেটা নিয়ে জল্পনা

সোমবার বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী শম্পাদেবীকে বলেন, “নতুন এসেছ। ভাল করে কাজ কর। দেবকুমার (‌দেবু) টুডুকে সঙ্গে নিয়েই জেলা পরিষদ চালাতে হবে। দেবকুমার আমার  খুব ফেভারিট ছেলে।’’ সভাধিপতি তা শুনে বলেন, ‘‘আপনার কথা অনুযায়ী চলব। জেলা পরিষদ সকলের সহযোগিতায় খুব ভাল চলছে।’’ 

Advertisement

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ০২:০২
Share:

হুগলির পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সকালে বর্ধমানে। নিজস্ব চিত্র

ভরা প্রশাসনিক বৈঠক থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতিকে ‘খুব ফেভারিট ছেলে’ বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে এক সঙ্গে চলার জন্য সভাধিপতি শম্পা ধাড়াকে নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নির্দেশের পরেই বিষয়টি নিয়ে বর্ধমানের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশের ধারণা, আসলে, দুই নেতার মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ মেটাতেই এমন বার্তা।

Advertisement

সোমবার বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী শম্পাদেবীকে বলেন, “নতুন এসেছ। ভাল করে কাজ কর। দেবকুমার (‌দেবু) টুডুকে সঙ্গে নিয়েই জেলা পরিষদ চালাতে হবে। দেবকুমার আমার খুব ফেভারিট ছেলে।’’ সভাধিপতি তা শুনে বলেন, ‘‘আপনার কথা অনুযায়ী চলব। জেলা পরিষদ সকলের সহযোগিতায় খুব ভাল চলছে।’’

তবে ‘খুব ভাল চলার’ কথা বলা হলেও দেবুববাবু ও শম্পাদেবীর মধ্যে ‘দ্বন্দ্বের’ কথা মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন, ধারণা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের। তৃণমূল সূত্রের খবর, দুই নেতার ‘দ্বন্দ্ব-কথা’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘রিপোর্ট’ করেন দলীয় নেতৃত্ব, জেলা পরিষদের সদস্য থেকে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। তৎকালীন জেলা পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সমস্যা মেটাতে বৈঠক করেন। শম্পাদেবীকে মন্ত্রী তখনও পরামর্শ দেন, দেবুবাবুকে সঙ্গে নিয়েই জেলা পরিষদ চালাতে হবে। তার পরেও বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হয়। চলতি বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে নবান্নে জেলার বিধায়কদের এক বৈঠকে জেলা পরিষদের ওই দুই কর্তাকে ডেকে পাঠানো হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে কথা কাটাকাটি, পারস্পরিক অভিযোগ তোলা, দেবুবাবুর কেঁদে ফেলার মতো ঘটনা ঘটে। ওই দিন দু’জনকেই ভর্ৎসনাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনও শম্পাদেবীকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘দেবু আমাদের পুরনো লোক। জেলা পরিষদ সম্পর্কে অভিজ্ঞ। ওকে নিয়েই তোমাকে চলতে হবে।’’

Advertisement

কিন্তু জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, কর্মাধ্যক্ষ থেকে সাধারণ সদস্যেরাও দু’টি শিবিরে বিভক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর ‘ভর্ৎসনার’ পরেও জেলা পরিষদের অন্দরমহল খুব একটা বদলায়নি বলেই আধিকারিকদের একাংশের সূত্রের খবর। সমস্যা মেটাতে হাল ধরতে আসতে হয় জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাকেও।

তবে দেবুবাবু ও শম্পাদেবীর এমন ‘দ্বন্দ্ব’ অতীতে ছিল না। এই জেলা পরিষদে গত বার সভাধিপতি ছিলেন দেবুবাবু। সংরক্ষণের আওতায় এ বার সভাধিপতির আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বার সভাধিপতি হিসেবে শম্পাদেবীর নাম প্রস্তাব, পাল্টা তাঁর জন্য বরাদ্দ ঘর, গাড়ি দেবুবাবুকে দেওয়ার জন্য শম্পাদেবীর আর্জি— এমন ‘মধুর’ নানা ঘটনা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এর কিছু দিন পরেই সমস্যার সূত্রপাত।

সমস্যার নেপথ্যে দু’জনের ‘ব্যক্তিত্বের’ সমস্যা, দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশেরই। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা প্রসঙ্গে দেবুবাবু অবশ্য বলেন, “দিদি যাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনিই এ বিষয়ে সব থেকে ভাল বলতে পারবেন।’’ আর ‘দ্বন্দ্ব’ আছে কি নেই, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে শম্পাদেবী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই যা বলার বলেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement