গলি রাস্তার জন্য যা বরাদ্দ, ভিন্ গ্রামের সঙ্গে সংযোগকারী বড় রাস্তা তৈরির বরাদ্দও সেই একই পরিমাণ টাকা! মজুরিও সংখ্যাও সেই একই। একশো দিনের প্রকল্পের বরাদ্দ নিয়ে এমনই গোলমালের অভিযোগ করল কালনা ১ ব্লকের বেগপুর পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েতের অভিযোগ, এর ফলে কার্যত কোনও কাজই করা যাচ্ছে না। সমস্যা সমাধানের দাবিতে পঞ্চায়েতের তরফে চিঠি দেওয়া হয়েছে কালনার মহকুমাশাসককেও।
নিয়ম অনুযায়ী, একশো দিনের প্রকল্পের বিভিন্ন কাজের পরিকল্পনা পঞ্চায়েত ব্লককে পাঠায়। জেলা থেকে অনুমোদন মেলার পরে ব্লকের নির্দেশে দরপত্র ডেকে কাজ শুরু করে পঞ্চায়েত। এ ক্ষেত্রেও চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষের পরিকল্পনাটি রূপায়ণে জন্য ব্লক নির্দেশ দেয় বেগপুর পঞ্চায়েতকে। অর্থও বরাদ্দ হয় প্রায় সাড়ে ন’কোটি টাকা। কিন্তু অনুমোদিত প্রকল্পটি দেখার পরেই চোখ কপালে ওঠে পঞ্চায়েত কর্তাদের।
কেন? মহকুমাশাসককে লেখা চিঠিতে পঞ্চায়েত প্রধান জানান ২১৩টি রাস্তার প্রতিটির জন্যই দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৬১ হাজার টাকা। অথচ প্রতিটি রাস্তার আকার, সরঞ্জাম সামগ্রী এক রকম নয়। পঞ্চায়েতের এক কর্মী জানান, প্রতিটি রাস্তায় বালি, সামগ্রী, পাথর-সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে মাত্র ৩৭ হাজার টাকা করে ধরা হয়েছে। বাস্তবে কোনও ভাবেই যা সম্ভব নয় বলে দাবি
ওই কর্মীর।
একই ভাবে গোল বেঁধেছে পুকুর কাটার কাজের ক্ষেত্রেও। পঞ্চায়েত জানায়, ছোট-বড় বিভিন্ন পুকুরের খরচ আলাদা। অথচ ৪৬টি পুকুরের প্রতিটির জন্যই খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ৮০৮ টাকা করে। শুধু তাই নয়, পুকুর কাটা বা সংস্কারের জন্য প্রতিটির ক্ষেত্রেই ধরা হয়েছে ৩৬০০ জনের মজুরি। অথচ, পঞ্চায়েতের দাবি, শুধুমাত্র ঠাকুরপুকুর এলাকায় একটি পুকুর কাটার জন্য ৩০ হাজার জনের মজুরি দরকার। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত প্রধান শিউলি মল্লিকের ক্ষোভ, ‘‘অনুমোদিত প্রকল্পে যে ভাবে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা ভুলে ভরা ও অবাস্তব।’’
পঞ্চায়েতের অভিযোগ, এই ত্রুটি ব্লক পর্যায়ে হয়ে থাকতে পারে। প্রকল্পের সংশোধন চেয়ে শিউলিদেবী চিঠি পাঠিয়েছেন বিডিও ও মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়াকে। পঞ্চায়েত কর্তাদের আশঙ্কা, অনুমোদিত প্রকল্প ধরে কাজ করতে গেলে পরে অডিটের সময়ে অনেক প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। সমস্যার কথা স্বীকার করে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের চিঠি পেয়েছি। কী ভাবে এর সমাধানসূত্র বের করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।’’