এ ভাবেই শুকোনো হচ্ছে প্রতিমা বেনাচিতিতে। ছবি: বিকাশ মশান।
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কাছে পিছু হঠলে তো পেট চলবে না। তাই কুমোরপাড়ার শিল্পীরা হাত গুটিয়ে বসে না থেকে ভিজে প্রতিমা শুকোনোর জন্য নিত্যনতুন পন্থা ব্যবহার করছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আবহাওয়ার উপরে তো আর পুজো নির্ভর করে না। পুজো হয় তিথি মেনে। কাজেই নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ করতেই হবে আমাদের।’’
শ্যামাপুজোর আয়োজনে মেতে উঠেছে শহরের বিভিন্ন ক্লাব। পারিবারিক পুজোর প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে বাড়ি বাড়ি। এ বারে দুর্গাপুজোর মতো বাদ সেধেছে সেই আবহাওয়া। পুজো শুরু হতে আর কয়েক ঘণ্টা বাকি। অথচ এখনও প্রতিমা শুকোয়নি বহু কুমোরপাড়ায়। কয়েকদিন আগেই নিম্নচাপের জেরে বহু জায়গায় জল ঢুকে গিয়েছিল। অথচ প্রতিমা ভাল করে না শুকোলে রং খেলবে না। মিলবে না দামও। দুর্গাপুরের কুমোরপাড়াগুলি ঘুরে দেখা গেল, প্রায় সব জায়গাতেই রাতদিন এক করে প্রতিমা শুকিয়ে তোলার কাজ করছেন শিল্পীরা।
এককালে কেরোসিনের লম্ফ জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকনোর কাজ করতেন শিল্পীরা। পরে সে জায়গা নেয় গ্যাসের বার্নার। প্রতিমার একাংশ ভিজে থাকলে বার্নার দিয়ে শুকিয়ে তোলা যায় সহজেই। সমস্যা হয়, যখন পুরো প্রতিমাই ভিজে থাকলে। বার্নার দিয়ে এক এক বারে সামান্য কিছু জায়গা শুকনো যায়। তা ছাড়া একজনকে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কাজ সারতে হয়। ফলে একটি প্রতিমা সম্পূর্ণ শুকিয়ে তুলতে বহু সময় লেগে যায়। আবার কর্মীও বেশি লাগে। তাই বার্নার ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন পন্থা নিয়েছেন শিল্পীরা। শিল্পীরা ব্যবহার করছেন টিন ও উনুন।
প্রতিমার মাথা ও মাটির সঙ্গে টিনের চাদর লাগিয়ে রাখছেন। নীচে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন উনুন। ফলে উনুনের সরাসরি তাপ লাগছে প্রতিমার গায়ে। টিনও গরম হচ্ছে। সেই তাপও প্রতিমার গায়ে লাগছে। আবার বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া আটকে যাচ্ছে টিনে। সারাক্ষণ কোনও কর্মীকেও একটি প্রতিমা শুকোনোর জন্য সেখানে থাকতেও হচ্ছে না। ওই শিল্পী একই সঙ্গে বহু প্রতিমা শুকোনোর কাজের দেখভাল করতে পারছেন। বেনাচিতির জেকে পাল লেনের শিল্পী অরুণ পাল প্রায় ৭০টি মূর্তি বানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে সময় ও খরচ দুই’ই বাঁচছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে। মুনাফাও বাড়বে।’’ একই বক্তব্য, পলাশডিহার শিল্পী গোবিন্দ পাল, এমএএমসি কলোনির শিল্পী সন্তোষ সূত্রধরেরও।