Bardhaman

প্রকল্পে ভর, পথ দেখাচ্ছেন লক্ষ্মী

সুতো পাকিয়ে সামান্য উপার্জনে কোনও রকমে ছেলে সঞ্জীবকে নিয়ে দিন কাটত তাঁর।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৪৬
Share:

লক্ষ্মী চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

বিকেল গড়ালেই মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়েন তিনি। ‘‘ধলু, মুন্নি, ছোটু, কুট্টি, টুনি, লালি... বাড়ি ফিরে আয়’’— এমন ডাকের সঙ্গে পরিচিত গোটা পাড়া। সবুজ ঘাস পেরিয়ে ছুটে আসে লাল, কালো, সাদা রঙের ছাগলের দল। প্রৌঢ়ার পিছু নিয়ে ঢুকে পড়ে বাড়িতে। শুরু হয় তাদের যত্নআত্তি। শুরু করেছিলেন সরকারি প্রকল্পে পাওয়া একটি ছাগল নিয়ে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মধ্য শ্রীরামপুরের ফরিদপুর এলাকায় লক্ষ্মী চক্রবর্তীর একচিলতে বাড়িতে এখন ৬০টি ছাগল। জীবনের দুঃসময় থেকে ছাগল পালন করে ঘুরে দাঁড়িয়ে এলাকার মহিলাদের স্বনির্ভর হওয়ার রাস্তা দেখাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দু’দশক আগে লক্ষ্মীদেবীর স্বামীর মৃত্যু হয়। ছেলের তখন চার বছর বয়স। সম্বল বলতে ছিল ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের একটি ঘর। সুতো পাকিয়ে সামান্য উপার্জনে কোনও রকমে ছেলে সঞ্জীবকে নিয়ে দিন কাটত তাঁর। অভাবের সংসারে মাধ্যমিকের পরে, ছেলের পড়াশোনাও আর এগোয়নি। এর পরেই ২০১৫ সালে ব্লক প্রাণিসম্পদ দফতর স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের একটি করে ছাগল দেয়। গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে একটি ছাগল পান লক্ষ্মীদেবী। সেই শুরু।

বছর পঞ্চাশের লক্ষীদেবী জানান, বাড়িতে এনে ছাগলটিকে যত্ন করে বড় করেন। বছরখানেক পরে তিনটি ছানা হয়। লালনপালন করে সেগুলিকে বড় করতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে ছাগলের সংখ্যা। বাড়ির পাশে তৈরি করেছেন ছাগল রাখার ঘর। সেখানে মাচা তৈরি করে সার দিয়ে ছাগল রাখা হয়। তবে সব ছাগলের সেখানে জায়গা না হওয়ায় রান্নাঘর, এমনকি, নিজেদের শোওয়ার ঘরেও রাখতে হয়।

Advertisement

প্রতিবেশীরা জানান, ভোর থেকে কাজ শুরু করে দেন লক্ষ্মীদেবী। ঘর থেকে ছাগলদের বার করে খড়, চাল, আটা, ভুসি মিশ্রিত খাবার দেন। দুপুরে ফের তাদের খাবার দিতে হয়। মাঠে যখন ঘাস থাকে, সেখানে ছাগল চরতে পাঠিয়ে দেন। বিকেল গড়ালেই লক্ষ্মীদেবীর ডাকে বাড়ি ফেরে ছাগলের দল। সেগুলির চিকিৎসার জন্য বাড়িতেই তিনি নানা ওষুধ রেখেছেন। তবে অসুখ বাড়লে নিয়ে যান কাছাকাছি সরকারি প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে, জানান প্রৌঢ়া।

বাড়ির উঠোনে বসে লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘এক সময়ে চরম অভাবে দিন কাটিয়েছি। ঘর ভর্তি ছাগল এখন আর সে সব দিন ফিরে আসতে দেয় না। লকডাউনের সময়ে এলাকার অনেকে কাজ না থাকায় সমস্যায় পড়েছিলেন। আমি তেমন কিছু টের পাইনি। ছাগল বিক্রি করে যা আয় হয়, আমার ও ছেলের দিব্যি চলে যায়। ছাগলদের জন্যও কিছু খাবার কিনি।’’ গত পাঁচ বছরে ৫০টি ছাগল বিক্রি করেছেন, জানান তিনি। তাঁর ছেলে সঞ্জীব বলেন, ‘‘বাড়িতে ছাগলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্ষায় ও শীতে ছাগলদের রাখতে খুব অসুবিধা হয়। সরকারি উদ্যোগে একটি ছাগলের ঘর পেলে ভাল হয়।’’

পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পকে ঠিক ভাবে হাতিয়ার করলে কতটা উন্নতি করা যেতে পারে, লক্ষ্মীদেবী তার উদাহরণ হতে পারেন। যে ভাবে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, তা অন্যদের কাছে প্রেরণা জোগানোর মতো। ওঁর কথা আমরা এলাকায় প্রচারের পরিকল্পনা করেছি।’’ শীঘ্রই ছাগলের জন্য ঘরও দেওয়া হবে তাঁকে, আশ্বাস তাঁর। শ্রীরামপুর এলাকার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে গঠিত সমবায়ের কো-অর্ডিনেটর সবিতা মজুমদার বলেন, ‘‘লক্ষ্মীদেবী যে ভাবে কাজ করেছেন, তাতে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন।’’ (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন