ধসের জেরে ফুটিফাটা চত্বর। ফাইল চিত্র
খনি অঞ্চলে ধস কবলিত ১২৬টি এলাকার প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার তালিকা তৈরি হয়েছে। কিন্তু পরিচয়পত্র বিলি ছাড়া সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, প্রকল্পের খরচ বহন করবে ইসিএল, কাজ করবে এডিডিএ। পরে ঠিক হয়, এডিডিএ-র বদলে রাজ্যের আবাসন দফতর কাজ করবে। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি।
প্রশাসন এবং ইসিএল সূত্রে জানা যায়, পুনর্বাসনের জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমি প্রয়োজন। কিন্তু তা না মেলায় আবাসন তৈরি করা যাচ্ছে না। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বারাবনি, জামুড়িয়া ও সালানপুর ব্লক এবং রানিগঞ্জ, কুলটি পুর এলাকায় মোট প্রায় ৫১৫ একর খাস জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে শহর গড়ে আবাসন তৈরি করার জন্য ইসিএলের তরফে নো-অবজেকশন শংসাপত্রও দেওয়া হয়েছে, জানান সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। তিনি বলেন, ‘‘পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় জমি রাজ্য সরকারকেই জোগাড় করতে হবে। সেখানে নির্মাণকাজের আগে আমাদের কাছ থেকে নো-অবজেকশন শংসাপত্র নিতে হবে।’’
খাস জমিতে নির্মাণের জন্য ইসিএলের কাছে শংসাপত্র নিতে হবে কেন? নীলাদ্রিবাবু জানান, সাধারণত যে জমির তলায় কয়লার স্তর থাকে সেখানে নির্মাণ করা যায় না। কারণ, ভবিষ্যতে সেই জমি খনন করে কয়লা তোলা হতে পারে। তাই ভূগর্ভে কয়লা নেই, এমন জমিতেই পুনর্বাসন দেওয়ার কথা। ভূগর্ভে কয়লা আছে কি না, খনি কর্তৃপক্ষ তা পরীক্ষা করে নো-অবজেকশন দেবেন। নীলাদ্রিবাবু অবশ্য আরও জানান, পরিস্থিতির বিচারে ইসিএল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে এলাকায় জমি থেকে অন্তত ৬০০ মিটার গভীরে কয়লার স্তর রয়েছে, আগামী ৫০ বছরেও সেখান থেকে কয়লা তোলার পরিকল্পনা নেই। সেখানে পুনর্বাসন প্রকল্পে নো-অবজেকশন দেওয়া হবে।
গত বছর ৪ নভেম্বর আবাসন দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় জামুড়িয়ায় এসে প্রয়োজনীয় জমির খোঁজ করে যান। দ্রুত আবাসন তৈরি ও আধুনিক শহরও গড়ে তোলার কথা জানান তিনি। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অর্থ অনুমোদনের পরে কয়লা মন্ত্রকের তরফে প্রকল্পের একটি রূপরেখা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত হিসেব তৈরি করবে রাজ্য সরকার। বাসিন্দাদের চারতলা আবাসনে স্থানান্তর করে বিদ্যুৎ পরিষেবা, রাস্তা, আলো, নিকাশি ও জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র ও চিকিৎসাকেন্দ্রও গড়ে দিতে হবে। আরও জানানো হয়েছে, এ সবের খরচ নির্ধারিত আর্থিক ক্ষতিপূরণের মধ্যে ধরা হবে না।
কবে এই প্রকল্প বাস্তবের আলো দেখে, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা।
(শেষ)