প্রতীকী চিত্র।
শ্বাসরোধ করে বৃদ্ধকে খুনে দোষী সাব্যস্ত হল ছেলে। বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর-জোড়ামন্দির এলাকার বছর পঁয়তাল্লিশের কৌশিক ঘোষকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেন বর্ধমানের ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের (দ্বিতীয়) বিচারক অঞ্জনকুমার দাশগুপ্ত। আজ, বৃহস্পতিবার দোষীর বক্তব্য শুনে সাজা ঘোষণা হবে।
এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী মোল্লা মহাতাবউদ্দিন বলেন, ‘‘ঘটনার মাত্র ১৩ মাসের মাথায় বিচার সম্পন্ন হল। অভিযোগকারী থেকে দোষীর নিকট আত্মীয়, সকলেই খুনের জন্য আদালতে তাঁকে দায়ী করেছেন। আদালত সব দিক বিচার করে কৌশিকবাবুকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। বিচারক তাঁর কাছেই জানতে চেয়েছেন, তিনি যাবজ্জীবন না ফাঁসি— কোন শাস্তি চান। সেটা শোনার পরেই বিচারক সাজা ঘোষণা করবেন।’’
পুলিশ জানায়, বর্ধমান শহরে এক সময় নামী ফুটবলার ছিলেন তুষারকান্তি ঘোষ (৭৫)। দুর্গাপুরের একটি সংস্থা থেকে অবসর নিয়ে ছেলের সঙ্গে জিটি রোডের ধারে জোড়ামন্দির এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর দুপুরে বর্ধমান থানায় গিয়ে কৌশিকবাবু আত্মসমর্পণ করেন। ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক কৃষ্ণা মুন্সি বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন, সে দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর সঙ্গে তুষারবাবুর কথা হয়েছিল। তাঁর ধারণা, বাবাকে খুনের পরে কৌশিকবাবু থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। পুলিশ জানায়, তদন্তে জানা যায়, টাকার দাবিতে ছেলে প্রতিদিনই তুষারবাবুকে মারধর করত। আদালতেও তেমনটা দাবি করেছেন তুষারবাবুর মেয়ে, কলকাতার বাসিন্দা সুদেষ্ণা ভাদুড়ি ও মৃতের ভাই তপনকান্তিবাবু।
মামলার তদন্তকারী অফিসার সোমনাথ নস্কর ও বর্ধমান থানার আর এক পুলিশ অফিসার কল্লোল কবিরাজ আদালতকে জানান, ঘটনার দিন দুপুরে হন্তদন্ত হয়ে থানায় আসেন কৌশিকবাবু। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে নিচু স্বরে জানান, বাবাকে গলা টিপে খুন করে ফেলেছেন তিনি। পুলিশ দেহ উদ্ধারের পরে সুরতহাল করতে গিয়ে গলায় দাগ পেয়েছিল। ময়না-তদন্তের রিপোর্টেও সে কথা উঠে এসেছে। এই মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষী ছিলেন। তবে কৌশিকবাবুর নিজস্ব কোনও আইনজীবী ছিলেন না। তাঁর হয়ে মামলা লড়েন সরকারের নিয়োগ করা আইনজীবী।
মামলার সহযোগী আইনজীবী সুরভি সামন্ত বুধবার দাবি করেন, ‘‘৫ জুলাই থেকে শুনানি শুরু হয়েছে। টানা ৫ মাস ধরে কৌশিকবাবু এজলাসে নির্লিপ্ত থাকতেন। সাক্ষ্যগ্রহণের পরে বিচারকের প্রশ্নে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। পরে আবার বলে ওঠেন, ‘আমি বাবাকে পছন্দ করি না’।’’