কোর্টের নির্দেশের পরেও পুকুর বোজানোর নালিশ

সরকার অধিগৃহীত পুকুর বোজানোর অভিযোগ উঠল কাটোয়ায়। জেলা মৎস্য দফতরের দাবি, হাইকোর্টের রায় অগ্রাহ্য করে বালি, সিমেন্ট দিয়ে কাটোয়ার স্টেশন লাগোয়া ঘোষহাটের ওই পুকুর বোজাচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

এই পুকুর বোজানোরই অভিযোগ উঠেছে। —নিজস্ব চিত্র।

সরকার অধিগৃহীত পুকুর বোজানোর অভিযোগ উঠল কাটোয়ায়। জেলা মৎস্য দফতরের দাবি, হাইকোর্টের রায় অগ্রাহ্য করে বালি, সিমেন্ট দিয়ে কাটোয়ার স্টেশন লাগোয়া ঘোষহাটের ওই পুকুর বোজাচ্ছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। দিন চারেক আগে পুকুরটি পুনরুদ্ধার করার জন্য থানায় অভিযোগও করেছেন পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার।

Advertisement

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রুদ্র মার্কেটের উত্তরদিকে ঘোষহাট মৌজার ৪৫শতকের পুকুরটিকে ঘিরে গোলমাল শুরু ১৯৯৩ সাল থেকে। সেই সময় প্রায় জনা তেরো মালিক ১০৬/৩১৯ দাগের ওই পুকুরটি ভরাট করে ওই অংশে বাড়ি তৈরি শুরু করে বলে অভিযোগ জানান এলাকাবাসী। পুরপ্রধান থেকে শুরু করে পরিবেশমন্ত্রী, ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাতেও কাজ না হওয়ায় ২০০১ সালে এপিডিআরে-এর শরণাপন্ন হন বাসিন্দারা। ওই সংগঠনের তরফে খোঁজখবর শুরু হলে পুকুর ভরাটের কাজ কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। ওই বছরই জেলা সহ মৎস্য অধিকর্তা পুকুর মালিকদের এক শরিককে পুকুরের ভরাট করা অংশ খুঁড়ে ফেলে তা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। নাহলে পুকুরটি মৎস্য দফতর অধিগ্রহণ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অভিযোগ, তাতেও পুকুর ভরাট করা থামেনি। এরপরেই পুকুরটি পরিচালনার ভার নেয় মৎস্য দফতর।

পরে পুকুরটির দখল নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন পুকুর মালিকেরা। কিন্তু বছর তিনেক আগে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই আবেদন খারিজ করে পুকুরের এলাকা পরিষ্কার করে পুকুরটি সংস্কারের নির্দেশ দেয় জেলা মৎস্য দফতরকে। কিন্তু সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে শেষ তিন বছর ধরে একটু একটু করে পুকুর ভরাট চলছেই বলে মৎস্য দফতরের দাবি। এমনকী, এপিডিআরের তরফে গত মাসে মহকুমাশাসকের কাছে পুকুরটি পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন জানানোর পরেও প্রশাসন নড়েচড়ে বসেনি বলে অভিযোগ। এরপরে পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সমরেন্দ্রনাথ কোলে দিনচারেক আগে ওই পুকুরের অন্যতম মালিক জগদীশ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। ইতিমধ্যে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর পুকুর মালিকদের বিরুদ্ধে কাটোয়া এসিজেএম আদালতে একটি মামলাও দায়ের করে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জগদীশবাবু বলেন, ‘‘পুকুর বোজানো বন্ধ। আমাকে বদনাম করার জন্য চক্রান্ত করে এটা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ভাস্কর মণ্ডল জানান, বিষয়টি মহকুমাশাসক ও বিধায়ককে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। তখন বিষয়টি পুরপ্রধানকে জানানো হয়েছিল।’’ খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি। এ দিন এপিডিআরের কাটোয়া শাখার সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু বেআইনি ভাবে পুকুর ভরাট বন্ধ করলেই হবে না, সেই সঙ্গে পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য যারা ভরাট করছে তাদের থেকে বাধ্যতামূলক ভাবে সংস্কারের যাবতীয় খরচ আদায় করা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন