Queen Elizabeth II

হুডখোলা গাড়িতে ডিএসপিতে রানি

কারখানার নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিল ১৩টি ব্রিটিশ ফার্মের কনসর্টিয়াম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সেটাই ছিল ইংল্যন্ডের বাইরে কোনও ব্রিটিশ উদ্যোগে সব থেকে বড় নির্মাণকাজ।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:০৩
Share:

দুর্গাপুরে শুভেচ্ছা জানানো হচ্ছে রানিকে।

১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১। শহরে এসেছেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। উপলক্ষ, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের স্টিল মেল্টিং শপের উদ্বোধন। রানির প্রয়াণের পরে সে সময়ের নানা ঘটনার কথাই শহর দুর্গাপুরের স্মৃতিতে ঘুরছে।

Advertisement

১৭ ফেব্রুয়ারি, আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা থেকে এসেছিলেন রানি। তাঁকে নিয়ে বিশেষ বিমান পানাগড় বিমানঘাঁটিতে নামে। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যসচিব আর গুপ্ত। সেখান থেকে গাড়ি করে দুর্গাপুরে পৌঁছেছিলেন এলিজ়াবেথ। দুর্গাপুর হাউজ়ে তাঁকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন ইস্পাতমন্ত্রী সর্দার স্মরণ সিংহ, ডিএসপি-র তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার পিসি নিয়োগী এবং কারখানা নির্মাণের দায়িত্ব থাকা ভারত-ব্রিটিশ যৌথ সংস্থার রেসিডেন্ট ডিরেক্টর ডিজে বেল। বাইরে তখন কয়েক হাজার মানুষ রানিকে দেখে উদ্বেলিত।

ডিএসপি সূত্রে জানা যায়, কারখানার নির্মাণ কাজের দায়িত্বে ছিল ১৩টি ব্রিটিশ ফার্মের কনসর্টিয়াম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সেটাই ছিল ইংল্যন্ডের বাইরে কোনও ব্রিটিশ উদ্যোগে সব থেকে বড় নির্মাণকাজ। রানি কারখানায় যান মাথা-খোলা গাড়িতে চড়ে। দু’পাশে হাজার-হাজার মানুষ তখন রানিকে দেখে উচ্ছ্বসিত। রানি কিছুক্ষণ কথা বলেন কারখানার আধিকারিক ও কর্মীদের সঙ্গে। নির্মাণ কাজের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এর পরে তিনি গাড়িতে চড়ে বিশাল কারখানা চত্বর পরিদর্শন করেন। রানি আসবেন বলে রাতারাতি তৈরি করা হয়েছিল, দুর্গাপুর হাউস। জনশ্রুতি, সে সময় তা পরিচিত হয় রানি হাউস নামে। রানিই এর উদ্বোধন করেন।

Advertisement

জানা যায়, রানি এক ইঞ্জিনিয়ারকে প্রশ্ন করেন, তিনি কোথা থেকে এসেছেন। সেই বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘স্কটল্যান্ড’। রানি তখন বলেন, ‘সেটা অনুমান করতে পারি। কিন্তু আপনি কোন শহর থেকে এসেছেন, সেটাই জানতে চাইছি।’ দুর্গাপুরে রানির জন্য একটি সংবর্ধনাসভারও আয়োজন করা হয়।

রানির প্রয়াণের পরে এ সব নানা স্মৃতিই এখন দুর্গাপুর জুড়ে। দুর্গাপুর হাউসের প্রথম অতিথি হিসেবে সই রয়েছে রানিরই। সে সই আজও সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ তথা প্রবীণ সিটু নেতা জীবন রায় সে দিন ছিলেন কারখানায়। অনেকের সঙ্গে দূর থেকে তিনিও দেখেছিলেন রানিকে।শুক্রবার খানিক আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, “রানি কেমন আছেন, সে বিষয়ে খোঁজখবর রাখছিলাম। মৃত্যু-সংবাদটা পেয়েই মনটা খারাপ হয়ে গেল।” তবে দূর থেকে দেখলেও সে স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল জীবনের চোখে। বলে চলেন, “রানির ব্যক্তিত্বে ছিল তারুণ্যের সঙ্গে গাম্ভীর্যের এক অদ্ভুত মিশেল। তিনি সবার সঙ্গে কথাও বলেন। স্টিল প্ল্যান্টের ভিতরে বৈঠক করেন। সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে হাত নাড়েন।”

ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন