Jobless

কাজ হারানো শ্রমিকের পুজোয় শুধুই অন্ধকার

এমন জীবন-যন্ত্রণা নিয়েই প্রতিদিন লড়াই করছেন নিতাইও। ২০১৩-য় শ্রমিক, এই পরিচয়টা হারিয়েছিলেন তিনি। কারণ, বেসরকারি ইস্পাত কারখানা থেকে সে বছরই ছাঁটাই হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২২ ০৯:২৫
Share:

কাজ হারানো শ্রমিক।

বাবা হিসেবে লজ্জা লাগে! দেবীপক্ষে কী আয়োজন হয়েছে জানতে চাওয়ায় কথা প্রসঙ্গে এমনটাই বলছিলেন সুপ্রকাশ দে।

Advertisement

ভাত জোটাতেই দিন চলে যায়। পুজো আবার কী?— পাল্টা প্রশ্ন ধেয়ে আসে নিতাই বাউড়ির থেকে।

— সুপ্রকাশ ও নিতাইয়ের মিল এক জায়গায়, ওঁরা কাজ হারানো শ্রমিক। দুর্গাপুজোর চার দিনও ওঁদের কাছে জীবন-সংগ্রামের লড়াইয়ের দিন। নতুন জামাকাপড়, আলোর রোশনাই, পুজোর জাঁকজমক কিছুই ছুঁয়ে যেতে পারে না ওঁদের।

Advertisement

বেসরকারি একটি ইস্পাত কারখানার প্রাক্তন ঠিকাশ্রমিক সুপ্রকাশ ভাঙেন নিজের কথা। ২০১৮-র অক্টোবরে, পুজোর মাসে কাজটা চলে যায় তাঁর। এখন দোকানে-দোকানে কিছু জিনিসপত্র বিলি করে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন। বলেন, “ছেলের স্কুলের ফি পর্যন্ত মেটাতে পারিনি। পড়াশোনা প্রায় বন্ধের মুখে। বাবা হিসেবে নিজেকে ধিক্কার দিই।”

এমন জীবন-যন্ত্রণা নিয়েই প্রতিদিন লড়াই করছেন নিতাইও। ২০১৩-য় শ্রমিক, এই পরিচয়টা হারিয়েছিলেন তিনি। কারণ, বেসরকারি ইস্পাত কারখানা থেকে সে বছরই ছাঁটাই হয়ে গিয়েছিলেন। এখন তিনি রাজমিস্ত্রির সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। বলেন, “সংসারটা চলবে কী ভাবে, সেটা ভাবতে গিয়েই দিন পেরিয়ে যায়। পুজোর সময়ে কোনও কাজ থাকে না। বরং, এই সময় দু’মুঠো ভাতের জন্য চিন্তা বাড়ে। উৎসবেও যেন অন্ধকারে ঢেকে থাকে চারপাশ।” ঘটনাচক্রে, কাজ হারানো এই শ্রমিকেরা যেন ‘সুদিনের সময়ে’র দুর্গাপুজোর জৌলুসের স্মৃতিটুকুও আর ছুঁয়ে দেখতে চান না। — এমন দু’টি নয়, করোনা, লকডাউনের ছোবলে শিল্পের জেলা বলে পরিচিত পশ্চিম বর্ধমানে নিতাই, সুপ্রকাশদের সংখ্যাটা কম নয় বলেই জানাচ্ছেওয়াকিবহাল মহল।

শ্রমিকের এই হাহাকার কেন? ‘বেঙ্গল সুবার্বান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল ঘোষ বলেন, “কয়েক বছরে শিল্পাঞ্চলে কোনও নতুন বড় লগ্নি নেই। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে। শুধু শিলান্যাস নয়। দ্রুত কারখানা চালু করতে হবে। তা না হলে, এমন হাহাকারে ভারী হবে বাতাস।” একই সঙ্গে, শিল্প-পরিকাঠামো উন্নয়নে তেমন কোনও উদ্যোগ এখনও দেখতে পাচ্ছেন না ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি সুব্রত লাহাও। শিল্পোদ্যোগীদের সংগঠনগুলি সূত্রেও জানা যাচ্ছে, প্রায় ৫০ বছর আগে সগড়ভাঙায় প্রায় ১২ একর জমিতে আরআইপি শিল্পতালুক গড়ে ওঠে। পুরনো কারখানা মালিকদের অনেকেই আর নেই। কিন্তু পরে মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তর সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। ২০১৬-য় বীরভানপুরের বন্ধ উড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গায় দুর্গাপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ফেজ় ২ তৈরির কথা জানানো হলেও, সেখানে পরিকাঠামো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ৫৮টি প্লটের অনেকগুলি এখনও বিলিও করা হয়নি বলে শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে।

যদিও, দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “শিল্প স্থাপনে এবং শ্রমিক-কল্যাণে রাজ্য সরকার সবসময় চেষ্টা করে। পানাগড় শিল্পতালুকে বহু নতুন কারখানার নির্মাণকাজ চলছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে। সামান্য কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। সেগুলি সমাধানের জন্যও রাজ্য সরকার উদ্যোগী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন