হুঁশ নেই: শিশুসন্তানকে নিয়ে সফর হেলমেট ছাড়াই। নিজস্ব চিত্র
চার দিনের মধ্যে তিনটি দুর্ঘটনা। প্রাণ হারালেন মোট চার জন। তাঁদের মধ্যে তিন জন মোটরবাইক আরোহী, কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। প্রশাসনের লাগাতার অভিযানের মাঝে পথ সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এই সব দুর্ঘটনার পরে।
মঙ্গলবার রাতে কালনা ২ ব্লকের সাতগাছিয়া এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এক যুবককে। পাশে পড়েছিল মোটরবাইক। কালনা শহরের বাসিন্দা কমল হাওলাদার (২৭) নামে ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানানো হয়। সে দিন বিকেলেই কালনার সোনাডাঙা এলাকায় ট্রাক্টরের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কায় মৃত্যু হয় এক মোটরবাইক আরোহীর। আহত হন তাঁর দুই সঙ্গী। মৃত্যু হয়েছে ট্রাক্টর চালকেরও। রবিবার বিকেলে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক স্কুলছাত্রের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুম্বইয়ে একটি গয়নার দোকানে কাজ করতেন কমল। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে ২০ জানুয়ারি বাড়ি এসেছিলেন। ২৭ জানুয়ারি ফেরার কথা ছিল। পরিবার সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরোন কমল। বিকেল পর্যন্ত কাঠিগঙ্গার একটি ক্লাবে তাঁকে দেখা যায়। সন্ধ্যায় হুগলির গুপ্তিপাড়া এলাকা থেকে কালনার দিকে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। পরে সাতগাছিয়ায় নির্জন রাস্তা থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। আশপাশের বাসিন্দাদের দাবি, একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কার পরে মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়ে মাথায় চোট পান কমল। মাথায় হেলমেট ছিল না।
এলাকাবাসীর দাবি, কমল বেশ গতিতে বাইক চালাতেন। বুধবার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ হাসপাতালে যান। রবিবার দুর্ঘটনায় যে স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল, সে সম্পর্কে দেবপ্রসাদবাবুর ভাগ্না। এ দিন পুরপ্রধান বলেন, ‘‘মাথায় যদি হেলমেট থাকত তাহলে আমার ভাগ্না বা এই ছেলেটি, কাউকেই হয়তো এ ভাবে প্রাণ হারাতে হতো না।’’
এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, পুলিশ কখনও অভিযান চালালে সেই রাস্তায় হেলমেট পরে যাতায়াত শুরু করেন বাইক আরোহীরা। মদ্যপ অবস্থাতেও অনেকে হেলমেট ছাড়া বাইক নিয়ে রাস্তায় দাপান। এ সবের ফলেই দুর্ঘটনা ঘটছে। কালনার এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, ‘‘এলাকায় কিছু ছাত্র ও যুবক দামি বাইকে চেপে হেলমেট ছাড়াই জোরে গাড়ি চালায়। অনেকে নানা কসরত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও পোস্ট করে। প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কড়া পদক্ষেপ না করলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।’’
কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, ‘‘শীঘ্রই একটি কর্মশালা করা হবে। সেখানে ছাত্র ও অবিভাবকদের বোঝানো হবে, হেলমেট পরা কতটা জরুরি।’’ তবে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, গোলাপ দেওয়া-সহ নানা কর্মসূচিতে ফল হচ্ছে না তেমন। মোটা অঙ্কের জরিমানা চালু করা দরকার। বেআইনি ভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে ধরা হলেও অনেককে ছেড়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতারা তৎপর হন। তাই বিশেষ ফল হয় না বলে পুলিশকর্মীদের একাংশের দাবি। জেলার পুলিশকর্তারা অবশ্য জানান, সচেতনতা বাড়াতে আরও কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে।
এরই মধ্যে সোনাডাঙায় মঙ্গলবার দুর্ঘটনায় মৃত ট্রাক্টর চালকের নাম-পরিচয় জানা গিয়েছে বলে জানাল পুলিশ। শ্রীমন্ত হাজরা নামে ওই চালকের বাড়ি মেমারির তেহা গ্রামে। দুর্ঘটনার পরে রাত পর্যন্ত তাঁর পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।