প্রতীকী ছবি
আগের দিন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন জেলা পরিষদের সদস্য দেবাশিস নাগ। বৃহস্পতিবার পদত্যাগের চিঠি জমা দিলেন পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির তিন সদস্য। পরপর দু’দিনে দলের জনপ্রতিনিধিদের এমন পদত্যাগ নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা বলে দাবি দলের একাংশের।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘বুধবার রাতে জেলা পরিষদের অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার কালনায় মহকুমাশাসকের কাছে আরও তিন জনের পদত্যাগপত্র জমা পড়েছে বলে শুনেছি। আইনি দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
পরপর জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের পদত্যাগে অবশ্য খানিক অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের অনেক নেতাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার পরে, আলোচনা করব উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে। তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হওয়ার পরে দলকে না জানিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ক্ষোভ থাকতে পারে। দলকে জানালে, তা আলোচনা করে মেটানো হত।’’
পূর্বস্থলী ২ ব্লকে জেলা পরিষদের ৪০ নম্বর আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের দেবাশিস নাগ। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবাশিসবাবু আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিন বার বিভিন্ন নির্বাচনে তিনি মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের ‘এজেন্ট’ হিসাবেও কাজ করেছেন। জেলা পরিষদে তিনি অধ্যক্ষের পদ পান। কেন পদত্যাগ করলেন, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য দেবাশিসবাবুর কাছ থেকে মেলেনি। বুধবার রাত থেকে তাঁর ফোন বন্ধ। জবাব মেলেনি এসএমএসের। বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শ্রীরামপুরে তাঁর বাড়িতে গেলে জানানো হয়, তিনি বাড়িতে নেই।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে পঞ্চায়েত ভোটে বেশিরভাগ আসনে যাঁরা জয়ী হন তাঁরা প্রাক্তন বিধায়ক তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায়ের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। দলের কর্মীদের একাংশের দাবি, স্বতন্ত্র ভাবে কাজের চেষ্টা করা-সহ নানা বিষয়ে দেবাশিসবাবুর সঙ্গে তপনবাবুর গোষ্ঠীর লোকজনের ‘দূরত্ব’ তৈরি হচ্ছিল। তা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের আকার নেয়।
বৃহস্পতিবার কালনায় মহকুমাশাসক সুমনসৌরভ মোহান্তির কাছে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মদনমোহন পাল, ফজলুল হক মণ্ডল ও মৃদুলা দেবনাথ। মহকুমাশাসকের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে ফজলুল অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতির দুর্নীতি ও ঔদ্ধত্যের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদে থেকেও কাজ করতে পারছিলাম না। সরকারের কাছে মাসিক ভাতা নিতে খারাপ লাগছিল। এখন থেকে দলের সাধারণ কর্মী হিসেবে কাজ করব।’’ দেবাশিসবাবুও অসম্মানিত বোধ করায় পদত্যাগ করেছেন বলে তাঁদের দাবি।
তপনবাবুর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে কিছু লোকজন দলের ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজেপির সঙ্গে যোগসাজস করে তাঁরা দলের ক্ষতির করারও চেষ্টা করেছেন। তাঁরা চলে গেলে দলেরই ভাল হবে।’’ দুর্নীতি এবং ঔদ্ধত্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, কোনও দুর্নীতি বা ঔদ্ধত্য তাঁদের নজরে পড়েছে কি না।’’