মলয়কে তোপ শিবদাসনের

উন্নয়নে মন শুধু নিজের এলাকাতেই

এ বার পঞ্চায়েত ভোট আসতে না আসতে আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে ফের মাথাচাড়া দিল তৃণমূলের গোষ্ঠী-কলহ।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটে জনতা মুখ ফিরিয়েছিল। এলাকা থেকে প্রথম বারের জন্য সাংসদ পেয়েছিল বিজেপি। পুরসভা নির্বাচনে অবশ্য হৃতজমি পুনরুদ্ধার করে রমরমিয়ে জিতেছে শাসকদল। এ বার পঞ্চায়েত ভোট আসতে না আসতে আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলে ফের মাথাচাড়া দিল তৃণমূলের গোষ্ঠী-কলহ। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই তোপ দাগলেন তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন (দাসু)।

Advertisement

সেই মঞ্চে মলয়বাবু উপস্থিত ছিলেন না। যদিও শিল্পাঞ্চলের দুই শীর্ষ নেতার শিবিরের বিবাদ এমন কাছাখোলা হয়ে পড়ায় অস্বস্তি বেড়েছে তৃণমূলে। রবিবার রানিগঞ্জের বাঁশড়ায় তৃণমূলের এসসি, এসটি, ওবিসি সেলের প্রথম পশ্চিম বর্ধমান জেলা কর্মী সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেই সম্মেলনেই শিবদাসন বলেন, ‘‘জেলায় দু’বারের নির্বাচিত মন্ত্রী (মলয়বাবু) রয়েছেন। পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদ, সবই আমাদের দখলে। অথচ, মন্ত্রী থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শুধু নিজের এলাকায় উন্নয়ন করছেন। জেলা জুড়ে কাজ হচ্ছে না। মন্ত্রী তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্রেরই উন্নয়ন করেছেন। কুলটি, বারাবনি, অন্ডাল, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জে উন্নয়ন করাও তাঁর দায়িত্ব।’’

শিবদাসনের আরও দাবি, আসানসোল ছাড়া অন্য এলাকার ছেলেমেয়েরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন না। দলের পদাধিকারীরা নিজের এলাকায় সংগঠন মজবুত না করলে জনভিত্তি হারাতে হবে। তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশই বলছেন, জেলা সভাপতির বক্তব্যে স্পষ্ট, তাঁর আক্রমণের মূল লক্ষ আসানসোল উত্তরের বিধায়ক। মলয়বাবু অবশ্য সমালোচনার জবাবে কিছু বলতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, খনি-শিল্পাঞ্চলে সংগঠনে মলয়বাবুর রাশ আলগা হতে শুরু করে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বাবুল সুপ্রিয়র কাছে আসানসোল কেন্দ্রে দলের প্রার্থী দোলা সেনের হারের পরে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব সেই রাশ অনেকটাই তুলে দেন শিবদাসন ও জিতেন্দ্র তিওয়ারির হাতে। পরের বছর আসানসোল পুরভোটে তৃণমূল বড় জয় পাওয়ার পরে শিবদাসন গোষ্ঠীর জমি আরও শক্ত হয়। মেয়র হিসেবে বেছে নেওয়া হয় জিতেন্দ্রবাবুকে। এক সময়ে মলয়বাবুর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত অনেকে জেলা সভাপতির গোষ্ঠীতে নাম লেখান। গত বছর দুর্গাপুর পুরভোটে শিবদাসন, জিতেন্দ্রবাবুকে নানা দায়িত্ব দেওয়া হলেও মলয়বাবুর কোনও ভূমিকা ছিল না। পাশাপাশি পুরনো তৃণমূল কর্মীদের একটা অংশের মনেও নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল।

সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে মলয়বাবুর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। দিন কয়েক আগে দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মলয়বাবুকে ধস এলাকায় পুনর্বাসন-সহ বেশ কিছু বিষয় দেখার দায়িত্বও দেন। তার পর থেকে শিবদাসন-গোষ্ঠী থেকে অনেকে ফের মলয়বাবুর শিবিরে ফিরতে শুরু করেছেন। আর তাতেই মলয়-বিরোধী গোষ্ঠী আষাঢ়ে মেঘ দেখতে শুরু করেছে বলে দলের নেতা-কর্মীদের অনেকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিল্পাঞ্চলের এক নেতার কথায়, “দলনেত্রীর নির্দেশেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভারসাম্য টানতে মলয় ঘটককে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সেটা দাসু-শিবিরের মাথাব্যথার কারণ। ওই বক্তব্য তারই বহিঃপ্রকাশ।’’ তাঁর মতে, কর্মী সম্মেলনে ঐক্যের কথা যত না বলা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মন্ত্রী-সহ নির্বাচিত পুরনো জনপ্রতিনিধিদের সমালোচনা করা হয়েছে।

শিবদাসনের যদিও ব্যাখ্যা, ‘‘দলের মজবুত ভিত যাতে ভেঙে না পড়ে, তা মাথায় রেখেই জন প্রতিনিধি ও কর্মী-সমর্থকদের পরামর্শ দিয়েছি। সমালোচনার যোগ্য হলে সমালোচনা করায় দোষের কিছু নেই। মলয়দা মন্ত্রী হিসাবে আসানসোলের অনেক কাজ করেছেন, এটা যেমন সত্যি, ঠিক তেমনই জেলার অন্যত্র উন্নয়নে তিনি মন দিতে পারেননি এটাও সত্যি। আমি শুধু মলয়দাকে নয় অন্য জন প্রতিনিধিদেরও একই ভাবে নিজের এলাকা ছাড়াও অন্য এলাকার কাজে মন দিতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন