মঙ্গলকোটে অশান্তি, প্রহৃত তৃণমূল নেতা

দু’দিন আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ। এ বার তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতির উপরে হামলা হল মঙ্গলকোটে। রবিবার সকালে লাখুরিয়া অঞ্চল সভাপতি অসীম দাস-সহ তৃণমূলের ছ’জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

হাসপাতালে অসীম দাস। —নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ। এ বার তৃণমূলের এক অঞ্চল সভাপতির উপরে হামলা হল মঙ্গলকোটে। রবিবার সকালে লাখুরিয়া অঞ্চল সভাপতি অসীম দাস-সহ তৃণমূলের ছ’জনকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অবশ্য বলেন, ‘‘দল কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করবে না। সন্ত্রাস ছড়ানোয় দলের কোন আস্কারা নেই।’’ পুলিশ জানায়, রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে এলাকায় নজরদারি চলছে।

Advertisement

সপ্তাহখানেক ধরেই মঙ্গলকোটের নানা এলাকায় গোলমাল চলছে। মঙ্গলকোট সদর, লাখুরিয়া, কল্যাণপুরে নিয়মিত বোমাবাজি হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। শুক্রবার জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ চৌধুরী দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার সময়ে কিছু দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়ে ও তাঁকে মারধর করে। শনিবার কল্যাণপুরে অশান্তি বাধে। পুলিশকর্মীরাও আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় কল্যাণপুর ও গোতিষ্ঠা থেকে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দলের জনা ছয়েক কর্মীর সঙ্গে মোটরবাইকে মঙ্গলকোট থানার দিকে যাচ্ছিলেন অঞ্চল সভাপতি অসীমবাবু। অভিযোগ, খেতিয়ার মোড়ে চারটি মোটরবাইকে চড়ে আসা জনা বারো দুষ্কৃতী তাঁদের পথ আটকায়। তার পরে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে পালিয়ে যায়।

লাখুরিয়ার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদ সদস্যা আরতি দাস বলেন, ‘‘ব্লকে কন্যাশ্রী দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল। তার মধ্যেই মারধরের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওঁদের উদ্ধার করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাই।’’ আহত অবস্থায় ছ’জনকে মঙ্গলকোট ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। আঘাত গুরুতর হওয়ায় অসীমবাবু ও তপন শাঁসারি নামে এক জনকে পরে বর্ধমানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অসীমবাবু দলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি, এলাকায় অসীমবাবুর সঙ্গে বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর অনুগামী বলে পরিচিত সাইফুল শেখের নানা কারণে বিবাদ চলছে। বিকাশবাবুর উপরে হামলাতেও সাইফুলের হাত ছিল বলে দলের একাংশের দাবি। এ দিনের ঘটনার পরে ব্লক সভাপতি অপূর্ববাবু বিধায়কের গোষ্ঠীর দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘বিকাশ চৌধুরীর উপরে হামলায় যারা রয়েছে তারাই অসীমের উপরে আক্রমণ করেছে বলে মনে হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা সকলেই চাকদার বাসিন্দা। তাদের একাধিক বার বিধায়কের দলীয় কার্যালয়ে যাতায়াত করতেও দেখা গিয়েছে।’’

এ দিন মঙ্গলকোটে যখন গোলমাল চলছে সেই সময়ে কাটোয়ায় মহকুমাশাসক ও গিধগ্রাম, সরগ্রাম, আলমপুর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন বিধায়ক। নেতার উপরে হামলা বা বোমাবাজিতে তাঁর কোনও অনুগামীর জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে বিধায়ক বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে দলবদল করে আসা লোকজনই এই কাজ করছেন। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’’

সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা মঙ্গলকোটের বাসিন্দা সৈয়দ বদরুদ্দোজার অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এলাকায় গোলমাল চলছে। কিন্তু পুলিশ ৪৬ জন বাসিন্দাকে আটক করে হয়রান করছে।’’ পুলিশ যদিও আটক করে রাখার কথা মানেনি। এসডিপিও (কাটোয়া) শচীন মাঁকড় শুধু জানান, এলাকায় নজর রাখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement