মাঝরাস্তায় চালক ও যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে দূরপাল্লার একটি এক্সপ্রেস বাস গন্তব্যে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনায় চূড়ান্ত হয়রান হন যাত্রীরা। ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আসানসোল দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেছেন বাসের চালক। ঘটনার নিন্দা করেছেন বাস কর্মী ও মালিক পক্ষের সংগঠন।
বরাকর থেকে আরামবাগ রুটের ওই দূরপাল্লার বাসের চালক জিতেন্দ্র যাদব অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৫টা নাগাদ তিনি বরাকর থেকে যাত্রীবোঝাই বাস নিয়ে রওনা হন। ৬টা নাগাদ আসানসোলে পৌঁছন। সেখানেও কয়েক জন যাত্রী তোলেন। খানিক পরেই তাঁর রওনা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভিযোগ, হঠাৎই তাঁর বাসের সামনে কয়েক জন সাঙ্গপাঙ্গকে নিয়ে এসে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অসীম মিত্র। বাসের চালক জিতেন্দ্রর অভিযোগ, ‘‘আমাকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শাসানো হয়, বাস নিয়ে এগোলে ভাল হবে না।’’ চালক দাবি করেন, তখন বাসের মধ্যে জনা ৩৫ দূরের এলাকার যাত্রী ছিলেন। অভিযোগ, ওই তৃণমূল নেতার অনুগামীরাই যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেন। আচমকা এমন ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায়। অনেকেই গন্তব্যে যেতে বিপাকে পড়েন। যাত্রীদের টিকিটের দাম ফেরানো হয়।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূল নেতা অসীম মিত্রের সাফ বক্তব্য, ‘‘ওই বাসে এত দিন আইএনটিটিইউসি-র এক সমর্থক চালকের কাজ করছিলেন। তাঁকে হঠাৎ মালিক মঙ্গলবার বাস থেকে নামিয়ে এক জন আইএনটিইউসি সমর্থককে কাজ দিয়েছেন। আমি সেই ঘটনার প্রতিবাদে চালক ও যাত্রীদের নামিয়ে বাস বন্ধ করেছি।’’ তাঁর দাবি, তিনি কোনও অন্যায় করেননি।
গোটা ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাস মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। তাঁদের মতে, শ্রমিক-মালিক বিবাদ হতেই পারে। কিন্তু সেটা আলোচনায় মেটানো সম্ভব। মাঝ রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী ও চালককে নামিয়ে দেওয়া অপরাধ। বড় বাসের মালিকদের সংগঠনের সহ-সভাপতি শান্তনু ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার নিন্দা করছি। প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিক।’’ আইএনটিইউসি নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘শ্রমিকের চাকরি যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু এই ঘটনায় যাত্রী হয়রানি হয়েছে। মালিকের সঙ্গে বসে মেটানো উচিত ছিল।’’ সিটুর বাস শ্রমিক সংগঠনের নেতা হেমন্ত সরকার বলেন, ‘‘এরা গায়ের জোর খাটিয়ে যাত্রীদেরও হয়রান করেছে। আমরা তীব্র নিন্দা করছি।’’ আসানসোলের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, ‘‘যাত্রী হয়রানি আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু আমাদের সমর্থককে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি মালিকের।’’ তিনি জানান, ওই বাসমালিকের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনায় মেটানোর ব্যাপারে কথা হয়েছে। গোটা ঘটনাটি নিয়ে বাসের মালিক ছোটু মণ্ডল কোনও মন্তব্য করতে চাননি।