নিয়মিত পর্যালোচনা

নজরে পুরভোট, ব্যবস্থা তৃণমূলে

হারের ময়নাতদন্তে এসে দল ও দলের শ্রমিক সংগঠনের সব কমিটি ভেঙে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষেক। নতুন কমিটি এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে সে জন্য বসে না থেকে সংগঠন ঢেলে সাজা শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০২:৪১
Share:

হারের ময়নাতদন্তে এসে দল ও দলের শ্রমিক সংগঠনের সব কমিটি ভেঙে দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষেক। নতুন কমিটি এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে সে জন্য বসে না থেকে সংগঠন ঢেলে সাজা শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লক্ষ্য, সামনের বছর পুরভোট।

Advertisement

গত চার বছরে পরপর নির্বাচনে ভোট কমছিল। শাসকদল তৃণমূলের জন্য লড়াই ক্রমশ কঠিন হচ্ছিল দুর্গাপুরে। শেষমেশ বিধানসভা ভোটে হাতছাড়াই হয়ে গিয়েছে শহর ও লাগোয়া এলাকা নিয়ে গড়া দু’টি কেন্দ্র। এ দিকে বছর ঘোরার আগেই পুরভোট। পুরসভা হাতছাড়া হলে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। এখন থেকেই তাই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাসে একটি শনিবার সব নেতা ও পুরসভার কাউন্সিলররা বৈঠকে বসে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। কোথায় কী খুঁত রয়েছে, তা কী ভাবে মেরামতি করা হবে, সে সব আলোচনা হবে। দলের দুর্গাপুর জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছর ঘুরতেই পুরভোট। তার আগে শহরের সংগঠন মজবুত করার জন্য যা-যা করা দরকার তা করা হবে।’’

দুর্গাপুরের ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৭টি পড়ে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের মধ্যে। এই কেন্দ্রে এ বার হেরে গিয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক তথা শহরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। এই কেন্দ্রের ২৫টি ওয়ার্ডেই তৃণমূল জোট প্রার্থীর থেকে পিছিয়ে ছিল। মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে তারা এগিয়েছিল, তা-ও মোট শ’দেড়েক ভোটে। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্র পুরসভার বাকি ১৬টি ওয়ার্ড ও কাঁকসা ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত নিয়ে গড়া। ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে, মাত্র একটি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল শাসকদল। সব মিলিয়ে, এ বার বিধানসভা ভোটে ৪৩টি ওয়ার্ডে শাসকদল বিরোধীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে প্রায় ৫৫ হাজার ভোটে।

Advertisement

তৃণমূলের এই ‘রক্তক্ষরণ’ শুরু হয়েছিল চার বছর আগেই। ২০১১ সালে বামেদের হাত থেকে দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্র তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পরের বছর দুর্গাপুর পুরসভায় তারা ক্ষমতায় এলেও, এই কেন্দ্রের ৯টি ওয়ার্ডে ভোট বাড়ে। কিন্তু কমে যায় ১৮টি ওয়ার্ডে। আবার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে সেখানে একটি ওয়ার্ড বাদে সব ক’টিতেই ১০-২০ শতাংশ করে ভোট কমে তৃণমূলের। প্রায় একই পরিস্থিতি ছিল দুর্গাপুর পূর্বের মধ্যে থাকা ইস্পাতনগরীর ওয়ার্ডগুলিতেও। এ বার দুর্গাপুরে হারের ময়না-তদন্তে এসে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস দলের সব কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এক মাসের মধ্যে নতুন করে সব কমিটি গড়ার কথা।

গত পুরভোটে ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল ২৯, বামেরা ১১, কংগ্রেস, বিজেপি ও নির্দল একটি করে আসনে জেতে। নির্দল প্রার্থী অবশ্য পরে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে দল ছেড়ে গিয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হন পুরনো তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। পরে আরও দু’জন কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দেন। ফলে, তৃণমূলের আসন সংখ্যা এই মুহূর্তে কমে হয়েছে ২৭। প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামি পুরভোটে দুর্গাপুরের ওয়ার্ড সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আসানসোলের মতো এখানেও ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়বে। সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। কাজেই এত বড় পুরসভা কোনও ভাবেই যাতে হাতের বাইরে না চলে যায় তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে উঠেপড়ে লেগেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই কেন্দ্রে হারের পরে দলীয় নেতৃত্ব চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছিলেন। ওই কমিটি তদন্ত করে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নিচুতলায় সেই ব্যবস্থা কতটা নেওয়া হল, আর কোনও পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে কি না, সে সব খতিয়ে দেখতে নিয়মিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি বুথে দশ জনের একটি কমিটি গড়া হচ্ছে। সেই কমিটি পনেরো দিন অন্তর বৈঠক করবে। সেখান থেকে উঠে আসা নির্যাস নিয়ে পর্যালোচনা হবে মাসের এক শনিবার শহরের সব নেতাকে নিয়ে বৈঠকে। ওই তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছিল, অনেক নেতার জনসংযোগে ভাটা পড়েছিল। তাই নিয়মিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগ রেখে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কাউন্সিলর-সহ নেতাদের। শহরের তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, মানুষ তাঁদের সঙ্গেই রয়েছেন। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য মুখ ফিরিয়েছেন। তবে এই সব ব্যবস্থা ঠিক মতো নিতে পারলে পুরভোটে আবার দল ঘুরে দাঁড়াবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement