বিয়ে ২০ বছর আগে, তবু ‘রূপশ্রী’

ইতিমধ্যে বিডিও এবং জেলাশাসকের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ।  ​

Advertisement

কাজল মির্জা

গলসি শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০২:২৭
Share:

এক তৃণমূল কর্মীই ‘কাটমানি’ নিয়ে তাঁদের এই প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দিয়েছেন বলে দাবি, প্রাপকদের অনেকের।

কারও বিয়ে হয়েছে কুড়ি বছর, কেউ ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তবে তাতে তাঁদের ২০১৮ সালে চালু হওয়া ‘রূপশ্রী’ প্রকল্পে টাকা পাওয়া আটকায়নি। তথ্য জানার অধিকার আইনে এমনই কথা জেনেছেন পূর্ব বর্ধমানের গলসির তৃণমূল কর্মী বদরুদ্দোজা মণ্ডল।

খোঁজ নিতে গিয়ে ঝুলি থেকে বেরিয়েছে আরও বেড়াল। গলসি ১ ব্লকের উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতের মহুনাড়া এলাকার এক তৃণমূল কর্মীই ‘কাটমানি’ নিয়ে তাঁদের এই প্রকল্পের সুবিধে পাইয়ে দিয়েছেন বলে দাবি, প্রাপকদের অনেকের। ইতিমধ্যে বিডিও এবং জেলাশাসকের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ।

বিডিও বিনয়কুমার মণ্ডল জানান, ওই প্রকল্পে জমা দেওয়া নথিপত্র যাচাই করে দেখা হচ্ছে, সেগুলি ঠিক রয়েছে কি না। গ্রামে-গ্রামে গিয়ে খোঁজও নেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার বেশি নয়, এমন পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়েতে সাহায্যের জন্য এই প্রকল্প ২০১৮-র এপ্রিলে চালু করেছে রাজ্য সরকার। প্রথম বার বিয়ের ক্ষেত্রে টাকা মিলবে। সে ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর বয়সের প্রমাণপত্র, বিয়ের কার্ড জমা দিয়ে আবেদন করতে হয় ব্লক অফিসে। ব্লক অফিস এবং পঞ্চায়েত যৌথ ভাবে তা খতিয়ে দেখার পরে, এককালীন ২৫ হাজার টাকার সরকারি সাহায্য মেলার কথা।
বদরুদোজ্জার দাবি, এলাকার একাধিক মাঝবয়সী বধূ রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন বলে স্থানীয় ভাবে কানে এসেছিল তাঁর। সেই সূত্রেই তথ্য জানার অধিকার আইনে বিডিও-র কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে আবেদন জানান তিনি। প্রাপকদের পরিচয় জেনে চোখ কপালে ওঠে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কুতরুকি গ্রামের বাসিন্দা ১৭ বছর আগে বিয়ে হওয়া এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা, ২০ বছর আগে বিবাহিত হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যা (দু’জনেই তৃণমূলের), মহুনাড়া গ্রামের এক বধূ, যাঁর মেয়ে দশম শ্রেণির পড়ুয়া। এ ছাড়া, সাত বছর ধরে বিবাহিত এক মহিলা, ছ’বছরের যমজ সন্তানের মা এক বধূও টাকা পেয়েছেন ওই প্রকল্পে। এর পরেই ওঠে অভিযোগ, শুধু উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৬০ জন তথ্য ভাঁড়িয়ে ওই টাকা পেয়েছেন।
তবে সরকারি সাহায্য পাওয়া ওই মহিলাদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ তৈরি করে দিয়ে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন মহুনাড়া গ্রামের তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত অম্লান ভুল। মহিলাদের দাবি, ‘‘আমরা হাতে পেয়েছি, ১৫ হাজার টাকা। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা করে কাটমানি নিয়েছেন অম্লানবাবু।’’ স্থানীয় সূত্রের দাবি, এক সময় পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তার ঘনিষ্ঠ ছিলেন অম্লানবাবু। সেই সূত্রেই তাঁর যোগাযোগ গড়ে ওঠে ব্লক অফিসে। যদিও অম্লানবাবুর দাবি, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ
করা হচ্ছে।’’
উচ্চগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মনসা বাউড়ির দাবি, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তবে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “আবেদন ভুয়ো হলে, প্রশাসন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। আমরাও চাই, দোষীরা শাস্তি পাক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন