ভোটে গ্রামে যাবেন শহরের নেতারা

গ্রাম এসেছিল শহরে। এ বার শহর যাবে গ্রামে। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে ‘রণকৌশল’ ঠিক করতে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের পর্যবেক্ষক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৮
Share:

গ্রাম এসেছিল শহরে। এ বার শহর যাবে গ্রামে। তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে ‘রণকৌশল’ ঠিক করতে এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের পর্যবেক্ষক মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

Advertisement

সম্প্রতি আউশগ্রামের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বোলপুরে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকেই আর ক’মাস পরেই পঞ্চায়েত ভোট, সে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল সূত্রের খবর, আউশগ্রামের বৈঠকের পরে বোলপুরে আর যাননি অরূপবাবু। বরং সেই সময়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন বর্ধমান সার্কিট হাউসে দফায় দফায় ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে।

এর আগেই অবশ্য দলের রণকৌশল ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্লাবে বসে অরূপবাবু দুই বর্ধমানের নেতাদের জানান, আসানসোল ও দুর্গাপুরে পুরভোটের সময় গ্রামের নেতারা প্রচুর পরিশ্রম করেছিলেন। এ বার গ্রামের ভোটেও শহরের নেতা বা কাউন্সিলরদের প্রতিটি পঞ্চায়েতে সাহায্য করতে হবে।

Advertisement

কী রকম হবে সেই সাহায্য? জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের আটটি ব্লকে আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার কাউন্সিলরদের এখন থেকেই দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলরেরাও জানিয়ে দিয়েছেন, ওয়ার্ড থেকে লোক নিয়ে গিয়ে প্রচার চালাবেন। পূর্ব বর্ধমানের ২৩টি ব্লকেও গ্রামের সঙ্গে শহরের নেতাদের জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন, বর্ধমান উত্তরের দায়িত্বে রয়েছেন শহরের প্রভাবশালী এক চেয়ারম্যান পারিষদ, পূর্বস্থলী উত্তরে রয়েছেন অন্য এক চেয়ারম্যান পারিষদ, গলসি, রায়না, পূর্বস্থলী দক্ষিণেও পাঠানো হয়েছে শহরের নেতাদের। মেমারি, কাটোয়া বিধানসভা এলাকায় শহরের নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও বেশ কিছু বিষয়ে সংগঠনের অন্দরে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানান তৃণমূল নেতারা। যেমন, প্রথমত, শহরের নেতারা ইতিমধ্যেই দলের সাংগঠনিক নানা সমস্যা মেটাতে বৈঠক শুরু করে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মেমারি, ভাতারের মতো এলাকায় পুরনো নেতাদের নিয়ে চলার জন্য দলীয় নেতৃত্বকে বার্তা দেন। সেই সূত্র ধরেই জামালপুর ও পূর্বস্থলীর নেতাদের নিয়ে জেলা পর্যবেক্ষক বৈঠক করেছেন বলে জানা গিয়েছে। তৃতীয়ত, তৃণমূল সূত্রের খবর, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আবার জোর দিচ্ছেন মহিলা-সংগঠনের উপরে। সম্প্রতি গুসকরা বাসস্ট্যান্ডে আউসগ্রাম ১ ব্লক মহিলা তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের সম্মেলনে যোগ দিয়ে অনুব্রতর কথায়, “পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংস আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। আগামী দিনে মহিলারা বাংলাকে সাজিয়ে তুলবেন।” তিনিও গুসকরা পুরসভার কাউন্সিলরদের পঞ্চায়েত ভোটে বিশেষ দায়িত্ব দেবেন বলে জানিয়েছেন। চতুর্থত, দলের ভিতরে থাকা মতানৈক্য মেটানো, পুরনোদের কাছে টেনে পাশে বসানোর কাজ অনেকটাই সেরে ফেলেছেন অরূপবাবু।

তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদের সভাধিপতি-সহ সাত জন কর্মাধ্যক্ষের আসন সংরক্ষণ মাথাব্যথা ছিল দলের। সেটাও সফল ভাবে সামলে দেওয়া দিয়েছে বলে অরূপবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন। দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশের দাবি, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও অরূপবাবু জানিয়েছেন, খুব অসুবিধা না হলে জেতা প্রার্থীদের সকলকেই দলীয় প্রার্থী করতে হবে। দরকারে অন্য আসন থেকেও পুরনো জেতা প্রার্থীদের জেতানোর জন্য সবাই ঝাঁপাবে।

কিন্তু ভোট ঘোষণার আগেই এমন তোড়জোড় কেন? অরূপবাবুর কথায়, ‘‘আমরা বছরভর পড়াশোনা করেছি। ভোট মানে তো পরীক্ষা। টেস্ট পরীক্ষার পরে তো সবাই পড়ায় জোর দেয়। তেমনটাই করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন