শহরের রাস্তায় টোটো। আসানসোলে। ছবি: শৈলেন সরকার
শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় বেআইনি অটো এবং টোটো বন্ধের নির্দেশ পৌঁছেছিল আগেই। তা কার্যকর করতে নেমে টোটোর শো-রুম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। ইতিমধ্যে গোটা দশেক এমন শো-রুম বন্ধ করা হয়েছে। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন জানান, ৩০ জুনের মধ্যে শিল্পাঞ্চলে টোটোর সমস্ত শো-রুম বন্ধ করা হবে। এ ছাড়াও বেআইনি অটো-টোটোর দাপট বন্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস কয়েক আগেই সরকারের তরফে শিল্পাঞ্চলে বেআইনি অটো-টোটো বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরে ভোটপর্ব এসে পড়ায় প্রশাসনের কর্তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই ভোট মিটতেই আবার সে নিয়ে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি আসানসোলে পরিবহণ দফতরের বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলাশাসক জানান, পরবর্তী নির্দেশ ছাড়া নতুন করে আর কোনও টোটো বিক্রি করা যাবে না। এই নির্দেশ না মানলে শো-রুমের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আসানসোল-দুর্গাপুরে অটো এবং মিনিবাসের মধ্যে বিবাদ অনেক দিনের। সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে টোটো। অটো ও টোটোর দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে সম্প্রতি দুর্গাপুরে বাস বন্ধের সিদ্ধান্তও নেন মালিকেরা। তবে পুরসভা পনেরো দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তাঁরা। আসানসোলে মিনিবাসের রুটে অটো চলা নিয়ে বারবার গোলমাল বেধেছে। বৈঠক করে সেই সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে এগিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু তার মধ্যেই আবার শহরের রাস্তায় টোটো ঢুকে পড়েছে। প্রায় দিনই অটো ও মিনিবাসের চালক-কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধছে টোটো চালকদের।
সেই সমস্যা বন্ধ করতে এ বার কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা। মহকুমাশাসক (আসানসোল) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘আসানসোলে ছ’টি ও রানিগঞ্জে চারটি টোটোর শো-রুম বন্ধ করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, শহরে আর কোথায় টোটোর শো-রুম আছে কি না তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। খোঁজ পেলেই বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোলের রাধানগর রোড, সাতাশা মোড়, রামবন্ধু তালাও, ঊষাগ্রাম, মুর্গাশোলে টোটোর বেশ কিছু শো-রুম আছে। সেগুলি বন্ধ করার পাশাপাশি প্রশাসনিক নজরে রাখা হয়েছে। এই সব সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে কর্মীদের কোনও রকম চাপের মুখে নতি স্বীকার না করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসক জানান।
ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বেআইনি অটো নিয়েও। আধিকারিকেরা জানান, পরিবহণ দফতরের অনুমতি ছাড়া কোনও অটো শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না। বৈধ অনুমতি নিতে হলে অটো চালকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র-সহ আবেদন ১৫ জুলাইর মধ্যে পরিবহণ দফতরে জমা দিতে হবে। কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে লাইসেন্স দেওয়া হবে। ১ অগস্ট থেকে শহরের রাস্তায় অনুমতিহীন কোনও অটো চলতে দেওয়া হবে না বলে প্রশাসনের তরফে আশ্বাস। জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমি সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আধিকারিকদের এই নির্দেশ কঠোর ভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছি।’’
মহকুমাশাসক প্রলয়বাবু জানান, শিল্পাঞ্চলে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩৬০ জন অটোকে বৈধ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আরও আবেদন আসছে। সেগুলির নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে আসানসোল পুর এলাকায় মোট ৭২টি অটোর রুট ঠিক করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে এই রুটগুলিতে ১৮৭০টি অটো চলাচলের লাইসেন্স দেওয়া হবে।
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া বেআইনি টোটো বন্ধ করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি বলেন, ‘‘অটোর বিকল্প রুট করে দেওয়ায় দু’পক্ষেরই সুবিধে হবে। তবে অটোর রুটে টোটো চললে তা উচিত হবে না। প্রশাসনকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’’ আসানসোল মিনিবাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রশাসনের উদ্যোগ ভাল। তবে না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস নেই।’’