জনস‌ংযোগ বাড়াতে মিষ্টি হাতে উর্দিধারী

খাঁকি পোশাক। মাথায় টুপি। হাতে মিষ্টির বাক্স। তাঁকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচলতি মানুষজন। চোখাচুখি হলেই কপালে জুটে যাচ্ছে আস্ত গোপালভোগ। মিষ্টিমুখ করে হাসতে হাসতে ফের যে যার পথ ধরছেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
Share:

মিষ্টি বিলি করছেন বরুণবাবু। নিজস্ব চিত্র।

খাঁকি পোশাক। মাথায় টুপি। হাতে মিষ্টির বাক্স।

Advertisement

তাঁকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন পথচলতি মানুষজন। চোখাচুখি হলেই কপালে জুটে যাচ্ছে আস্ত গোপালভোগ। মিষ্টিমুখ করে হাসতে হাসতে ফের যে যার পথ ধরছেন। আর সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘“পুলিশের কাজ সেবা করা। প্রতিনিয়ত সেটাই করি। আমার বন্ধনীতে কোনও বাছবিচার নেই।”

তিনি বরুণ সরকার। বর্ধমান ট্রাফিক পুলিশের এএসআই। ভাইফোঁটার আগের দিন, সোমবার দুপুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার জন্যে শহরবাসীকে মিষ্টিমুখ করালেন তিনি। কার্জন গেটের মোড়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে বাক্স থেকে একের পর এক মিষ্টি তুলে দিলেন পথচলতি মানুষদের। প্রাক্তন বিচারক থেকে রিকশাচালক বাদ পড়লেন না কেউ। কার্জনগেট ছাড়িয়ে মিষ্টির স্বাদ পেল বীরহাট মোড়ও। মোট চারশো মিষ্টি বিলি করেন তিনি। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দশমীর দিনেও পুলিশ লাইন থেকে তিনি এ ভাবে মিষ্টি বিলি করেছিলেন বরুণবাবু। পুরোটাই কারও সাহায্য ছাড়া বেতনের টাকায়।

Advertisement

বরুণবাবুই জানান, ১৯৮৪ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন তিনি। তারপর থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে মিষ্টি বিলি ও অন্য সামাজিক কাজ করতেন। ২০০৩ সাল থেকে তা নিয়মিত হয়। তাঁর দাবি, ‘‘আমার মনে হয় এতে পুলিশের সঙ্গে জনসংযোগ আরও দৃঢ় হবে।” বরুণবাবুর বাড়ি পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুরে। চাকরিসূত্রে জেলার যে প্রান্তেই গিয়েছেন সেখানেই জনসংযোগের হাতিয়ার করেছেন মিষ্টিকে। এখন বর্ধমান শহরের ৫ নম্বর ইছালাবাদে যৌথ সংসারে থাকেন তিনি। এ রকম খেয়াল কেন? বরুণবাবুর কথায়, “আমার বাবা অমূল্য সরকারও পুলিশে চাকরি করতেন। বাবা কী ভাবে জনসংযোগ করে ভাল পুলিশ হয়ে উঠেছিলেন তার গল্প শুনে গর্বিত হতাম। আমিও জনসংযোগ করার চেষ্টা করি, যাতে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদল হয়।”

লাঠি হাতে তেড়ে যাওয়া পুলিশই যে ডেকে নিয়ে মিষ্টি দেবে তা কল্পনাতীত ছিল টোটো চালক সম্বিৎ রায় কিংবা সুকান্ত সাহাদের। তাঁদের কথায়, “কার্জন গেটের পাশে জিটি রোডের উপর টোটো দাঁড় করালেই উনি লাঠি হাতে তেড়ে আসেন। সেই তিনিই ডেকে মিষ্টি খাওয়ালেন। বুঝলাম, কর্তব্যের কারণে তাঁকে লাঠি নিয়ে তাড়া করতে হয়।” বরুণবাবুর একমাত্র মেয়ে, একদাশ শ্রেণির ছাত্রী সুদীপা বলে, “বাবা যে কাজ করেন, তাতে আমি খুবই গর্বিত। বাবার মতো সবার উচিত নিজের মত করে জনসংযোগ করা। তাতে পুলিশেরই সম্মান বাড়বে।’’ পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “আমি এ রকম ঘটনা জানতাম না। উনি খুব ভাল কাজ করেন। আমরা ওঁর এই কাজের জন্য সম্মানিত করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন