রেস্তরাঁয় হানা, ধৃত ২ কাটোয়ায়

সোমবারের সেই অভিযানেই বাজেয়াপ্ত হল পচে যাওয়া মাছ, মাংস, নোংরা ভর্তি তেল, শ্যাওলা পড়া মশলা-সহ একাধিক খাবার জিনিস। শহরের কাছারি রোডের একটি রেস্তরাঁর মালিক এবং অন্যটির কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। অন্য খাবারের দোকান, রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কাটোয়া পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১৩:০৭
Share:

বাজেয়াপ্ত: বাসি ও পচা খাবার নিয়ে যাচ্ছে পুরকর্তারা ও পুলিশ। সোমবার। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কেউ বললেন, বিক্রিই নেই, পচা মাল কোথা থেকে আসবে? কারও মুখে শোনা গেল, ‘এ তো রেখেছি নিজেদের খাবার জন্য’'! কলকাতার ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে কাটোয়া পুর-এলাকার দশটি হোটেল, রেস্তরোঁ এবং মাছের দোকানে পরিদর্শনে গিয়ে দোকান মালিকদের কাছ থেকে এ রকমই নানা ‘অজুহাত’ শুনলেন পুরসভার আধিকারিকেরা।

Advertisement

সোমবারের সেই অভিযানেই বাজেয়াপ্ত হল পচে যাওয়া মাছ, মাংস, নোংরা ভর্তি তেল, শ্যাওলা পড়া মশলা-সহ একাধিক খাবার জিনিস। শহরের কাছারি রোডের একটি রেস্তরাঁর মালিক এবং অন্যটির কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতারও করে। অন্য খাবারের দোকান, রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কাটোয়া পুরসভা।

মৃত পশুর দেহ ভাগাড় থেকে তুলে এনে কলকাতার বিভিন্ন রেস্তরাঁয় বিক্রির ঘটনা প্রশাসনের নজরে এসেছে। তার পর থেকেই জেলায় জেলায় পুরসভাগুলি আচমকা হানা দিতে শুরু করেছে এলাকার বিভিন্ন রেস্তরাঁ এবং খাবারের দোকানে। একাধিক জায়গায় পচা বা বাসি মাছ-মাংস, মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া মশলার প্যাকেট রাখা হচ্ছে—এমন ছবিও পুর-আধিকারিকদের নজরে এসেছে।

Advertisement

সেই সূত্র ধরেই কাটোয়াতেও অভিযান চালায় পুরসভা। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পুর-প্রতিনিধিদের একটি দল কাটোয়া থানার পুলিশের সহযোগিতায় হোটেল পরিদর্শনে যায়। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদীপ্তময় ঘোষ এবং পুরসভার স্যানিটারি ইনসপেক্টর মলয়কান্তি ঘোষ। প্রথমেই তাঁরা ঢোকেন পুরসভার উল্টোদিকের একটি হোটেলে। কাটোয়া শহরের ওই হোটেল অনেক দিনের। তখনও হোটেলে মালিক এসে পৌঁছননি। ফ্রিজ খুলতেই একে একে বেরিয়ে পড়ে বরফে ঢাকা দেওয়া রান্না করা চিংড়ি, পমফ্রেট ও ইলিশ মাছ, কালো হয়ে যাওয়া মাংস। বাটি ভর্তি শ্যাওলা পড়ে যাওয়া মশলা দেখেও চমকে যান পুর-আধিকারিকেরা। সেগুলো নাকের কাছে আনতেই গা গুলিয়ে ওঠে। ওই সব জিনিসের পাশাপাশি সেদ্ধ করে রাখা নুডলস, দুর্গন্ধ বের হওয়া মোমো বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ফ্রিজ খুলে পরীক্ষা পুলিশকর্মীর। কাছারি রোডের রেস্তরাঁয়। নিজস্ব চিত্র

পরের গন্তব্য ছিল ডাকঘর মোড়, হাসপাতালের ভিতরে ও কাছারি রোড। এই তিন জায়গায় হোটেল-রেস্তরাঁয় তেমন কিছু মেলেনি বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। কিন্তু, কাছারি রোডেরই আর একটি দোকান থেকে রান্না করা মাংস, বিরিয়ানির মশলা বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেখানে মেলে মেয়াদ উত্তীর্ণ বোতলবন্দি জলও! স্টেশনবাজার চৌরাস্তার মাংসের দোকানে গিয়ে আধিকারিকেরা দেখেন, বেশির ভাগ দোকানে আগের দিনের কেটে রাখা মাংস পড়ে আছে, মাংস ঘিরে উড়ছে মাছি। কোথাও আবার ছাল ছাড়ানো মুরগির ছাল রেখে দিয়েছেন বিক্রেতা। পাঁঠার মাংসের দোকান থেকে পচন ধরে যাওয়া ঠ্যাং বাজেয়াপ্ত করা হয়। পাঁঠার ঠ্যাং ঝুলিয়ে রাখার বদলে তা পরিষ্কার কাপড়ে মুড়ে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয় বিক্রেতাদের।

তবে এ দিন বেশির ভাগ বিক্রেতাকেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘দোকানে বিক্রি কম, পচা মাল থাকবে কী ভাবে?’ কোথাও রেস্তরাঁর কর্মীরা বলেছেন, ‘মালিক নেই, জানি না ফ্রিজে কী রাখা আছে’। সুবোধ স্মৃতি রোডের একটি রেস্তরাঁয় অভিযান চালিয়ে ধুলো জমা রান্নার তেল ও বিরিয়ানির জন্য জমিয়ে রাখা পচে যাওয়া ভাত, পোস্তর তরকারি পান পুর-আধিকারিকেরা। ওই রেস্তরাঁর মালিকের অবশ্য দাবি, ‘‘ওই ভাত, পোস্ত আমাদের নিজেদের খাবার জন্য। বিক্রির জন্য নয়।’’

অভিযানের পরে কাউন্সিলর সুদীপ্তময়বাবু বলেন, ‘‘১০টি দোকানের মালিক ও কর্মীদের বলা হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পরিবেশন করতে। কথা না শুনলে পুরসভা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’’ যাঁদের দোকান থেকে পচে যাওয়া খাবার উদ্ধার হয়েছে, তাঁদের এ দিনই পুরসভায় ডেকে পাঠানো হয়। পাঁচটি খাবারের দোকানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা জেনেছি, ১০টি দোকানের একটিরও ফুড লাইসেন্স নেই। নেই অগ্নি নির্বাপণের কোনও ব্যবস্থাও। এ সব চলতে পারে না।’’ খাবারের দোকানগুলির উপরে পুরসভার নজরদারি চলবে বলেও পুরপ্রধান জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন