প্রত্নবস্তুর ক্ষতি রুখতে সংগ্রহশালা সংস্কার

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুকার দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১০
Share:

সংস্কারের পরে বদলে যাবে এই ছবি। নিজস্ব চিত্র

জায়গার অভাবে পলিথিনে মুড়ে রাখা রয়েছে রাজাদের আমলের মূল্যবান তৈলচিত্র। ক্ষতির ভয়ে বাক্সবন্দি হয়ে রয়েছে প্রাচীন প্রত্নবস্তু থেকে মুদ্রা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালা সংস্কারের পরে, ওই সব প্রাচীন প্রত্নবস্তু সকলের সামনে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাপত্তার কারণে এখনই প্রাচীন মুদ্রা ‘ভল্ট’-এর বাইরে আনা হবে না।

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে রাজবাটীর ‘নাচঘরে’ সংগ্রহশালাটি উঠে আসে। তারপর থেকে আর সংস্কার হয়নি। প্রায় ১২০ বছরের পুরনো বাড়ির দেওয়ালে নোনা ধরেছে। ছাদের কোণা চুঁইয়ে জল পড়ছে। ফলে, সংগ্রহশালায় থাকা প্রত্নবস্তু ও তৈলচিত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে মিউজিয়ামের কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা বিভিন্ন আসবাব পাল্টানো, নাচঘর সংস্কার করার প্রস্তাব দেন কর্তৃপক্ষকে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি প্রায় সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দও করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রাজবাটীকে (‌পোশাকি নাম মহতাব মঞ্জিল) ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল ‘ঐতিহ্য ভবন’ বলে ঘোষণা করেছে ‘হেরিটেজ কমিশন’। কিউরেটরের তত্ত্বাবধানেই বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে কাজটি করা হবে, সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সংগ্রহশালায় লর্ড কার্জনের মূর্তি রয়েছে। রয়েছে বর্ধমানের রাজা কীর্তিচাঁদ, আফতাবচাঁদ, উদয়চাঁদের মূর্তিও। এ ছাড়াও মঙ্গলকোট থেকে পাওয়া কুষাণযুগ, পাল-সেন যুগ ও তার পূর্ববর্তী যুগের মূর্তিও রয়েছে। একাধিক বিষ্ণুমূর্তির সঙ্গে উদয়চাঁদের রাজ্যাভিষেকের তৈলচিত্র রয়েছে। যা তৈরি করতে সেই সময়েই ১৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল, জানান রঙ্গনবাবু। এ ছাড়া, রাজ পরিবারের সদস্যদের ছবি প্রাচীন তৈলচিত্র সংগ্রহশালার দোতলায় টাঙানো রয়েছে। কিউরেটরের দাবি, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া, আমাদের রাজ্যে আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এত বড় সংগ্রহশালা নেই।’’

Advertisement

নজরে

• ২০১৩ সালের ২৯ এপ্রিল মহতাব মঞ্জিলকে ‘ঐতিহ্য ভবন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ‘হেরিটেজ কমিশন’। এখানেই রয়েছে সংগ্রহশালা।
• মঙ্গলকোট থেকে পাওয়া কুষাণযুগ, পাল-সেন যুগ ও তার পূর্ববর্তী যুগের সূর্য, পার্বতী, বুদ্ধমূর্তির মতো নানা প্রত্মবস্তু রয়েছে।
• রয়েছে রাজা উদয়চাঁদের রাজ্যাভিষেকের তৈলচিত্র। যা তৈরি করতে সেই সময়েই ১৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল বলে মিউজিয়াম সূত্রে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তুকার দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক পর্যায়ের সব কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পুজোর ছুটি পড়লেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সমস্ত প্রত্নবস্তু ও তৈলচিত্র এক দিকে সরিয়ে পলিথিনে মুড়ে ফেলা হবে। কিউরেটরের নির্দেশমতো বিশেষজ্ঞ সংস্থা কাজ করবে। প্রয়োজন মতো আসবাবপত্রও তৈরি করা হবে। কিউরেটর বলেন, “মুঘল আমলের শেষ দিক ও ইউরোপীয় কলোনিয়াল ধাঁচ মিলিয়ে মহতাবচাঁদ এই স্থাপত্য নির্মাণ করেন। ৩০ ইঞ্চি দেওয়ালের এই বাড়ির নীচের তলাতেও হাওয়া, আলোর অভাব নেই।’’ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডেনমার্ক, ব্রিটিশ, চিনা শিল্পী থেকে ভারতের বিখ্যাত শিল্পীদের বেশ কিছু তৈলচিত্র পলিথিনে মোড়া রয়েছে। সূর্য, পার্বতী, বুদ্ধমূর্তি-সহ ১২টি প্রত্নবস্তু ও ছোট ছোট অনেকগুলি প্রাচীন মূর্তিও বাক্সবন্দি রয়েছে। কিউরেটর জানান, কালনার বৈদ্যপুর থেকে একটি জৈন মূর্তি মিলেছিল। প্রায় তিন ফুট লম্বা, দেড় ফুট চওড়া বেলে পাথরের তৈরি ওই পঞ্চতীর্থিকা মূর্তিটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রচুর। মূর্তিটি বিশেষজ্ঞ বা গবেষকদের আগ্রহ বাড়াবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন