Migrant Labour Death

তামিলনাড়ুতে অস্বাভাবিক মৃত্যু বর্ধমানের পরিযায়ী শ্রমিকের, পরিবারের দাবি, ‘এসআইআর আতঙ্কেই’! দেহ ফিরল গ্রামে

পরিবার জানিয়েছে, মৃত বিমল কাজের সূত্রে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন। গত ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে সেখানকারই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ২২:০০
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

তামিলনাড়ুতে কাজে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। শনিবার সন্ধ্যার পর তাঁর দেহ এসেছে গ্রামের বাড়িতে। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে পরিবারের দাবি, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) হবে শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ব্যক্তি। সেই আতঙ্ক থেকেই মৃত্যু হয়েছে।

Advertisement

জানা গিয়েছে, মৃতের নাম বিমল সাঁতরা (৫১)। জামালপুরের নবগ্রামের বাসিন্দা তিনি। পরিবার জানিয়েছে, মৃত বিমল কাজের সূত্রে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন। গত ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে সেখানকারই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে তামিলনাড়ু যান পুত্র বাপি সাঁতরা। তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর ওরাতানাডু থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলাও দায়ের করেছেন তিনি।

বাপির দাবি, তাঁর বাবা ধান রোয়ার কাজে তামিলনাড়ু গিয়েছিলেন দিনকয়েক আগে। এসআইআরের ঘোষণা হবে শোনার পর থেকেই চিন্তায় পড়েন বিমল। এসআইআর হলে ভোটার তালিকায় নাম থাকবে কি না, তা নিয়েই আশঙ্কায় ছিলেন। বার বার সে কথা বলতেনও। তাঁর কথায়, ‘‘ওই আতঙ্কেই বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার পরেই মৃত্যু হয় তাঁর।’’ শুক্রবার বিমলের দেহের ময়নাতদন্ত হয়।

Advertisement

বিমলের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নবগ্রামে। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর দেহ এসে পৌঁছোয় গ্রামে। খবর পেয়ে বিমলের বাড়িতে যান জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি এবং অন্য তৃণমূল নেতারা। বিধায়কের দাবি, রাজ্যে প্রায় আড়াই বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। সেই কারণে অনেকেই ভিন্‌রাজ্যে যাচ্ছেন। বিমলও গিয়েছিলেন। সেখানেই এসআইআরের কথা শুনে চিন্তিত ছিলেন। ভয়ও ছিল তাঁর মনে। সেই কারণে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তৃণমূল সূত্রে খবর, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ নবগ্রামে যাচ্ছেন। সেই নির্দেশ পাওয়ার পরেই তাঁরা নিহতদের বাড়ি যান। সেখানে তাঁরা বিমলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের সমবেদনা জানান। স্বপন বলেন, “এসআইআরের আতঙ্কে আরও একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। এর জন্য দায়ী নির্বাচন কমিশন।” তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “বিমল সাঁতরা এসআইআরের আতঙ্কে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।”

যদিও এসআইআর ‘আতঙ্কে’ মৃত্যুর দাবি মানতে নারাজ পদ্মশিবির। বিজেপির জামালপুর-১ মণ্ডলের সভাপতি প্রধানচন্দ্র পালের কথায়, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। এসআইআরের জন্য বিমলের মৃত্যু হয়নি। অন্য কারণে মৃত্যু হয়েছে। পায়ের তলার মাটি হারিয়ে তৃণমূল উল্টোপাল্টা বলছে।’’

দিন কয়েক আগে এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের কারণে আত্মহত্যা করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ কর। উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ সে কথাই বলা ছিল বলে পুলিশের দাবি। যা নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।

তার মধ্যেই শোনা যায় কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা খাইরুল শেখ বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বছর ষাটের ওই বৃদ্ধ। এআইআর ঘোষণার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। সেই কারণে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন খাইরুল।

শুধু তা-ই নয়, এসআইআর আতঙ্কে বীরভূমের ইলামবাজারেও এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। গত বৃহস্পতিবার ইলামবাজারের স্কুলবাগান সুভাষপল্লির বাড়ি থেকে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় উদ্ধার হয় ক্ষিতীশ মজুমদার নামে ওই বৃদ্ধের। পরিবারের দাবি, গত কয়েক দিন নিয়ে এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন ক্ষিতীশ। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। মূলত তা নিয়েই চিন্তিত ছিলেন। পানিহাটি, বীরভূমের পর এ বার পূর্ব বর্ধমানে এসআইআর আতঙ্কে অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ প্রকাশ্যে এল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement