রাস্তায় পড়ে বাইক, চার কিমি দূরে মিলল যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ সংস্থার অণ্ডালের কার্যালয়ে কর্মরত সঞ্জিত অন্য একটি খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। বছরখানেক আগে কুলটির চিনাকুড়িতে খুন হন স্থানীয় বাসিন্দা রাজকাপুর সিংহ ওরফে গোবরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কুলটি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৩
Share:

শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার পাশে দাঁড় করানো রয়েছে মোটরবাইক। তার আশপাশে রক্তের দাগ। সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মধ্যে উদ্ধার হল যুবকের দেহ। মাথায় গুলির চিহ্ন, হাত-পা-চোখ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় কুলটির বিনোদ বাঁধ গ্রাম লাগোয়া অবৈধ খাদান থেকে উদ্ধার হল রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্মী সঞ্জিত পাসোয়ানের (৩৭) দেহ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছে তাঁকে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ সংস্থার অণ্ডালের কার্যালয়ে কর্মরত সঞ্জিত অন্য একটি খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। বছরখানেক আগে কুলটির চিনাকুড়িতে খুন হন স্থানীয় বাসিন্দা রাজকাপুর সিংহ ওরফে গোবরা। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সঞ্জিতকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তিনি জামিনে মুক্ত ছিলেন। মঙ্গলবার আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘পুরনো শত্রুতার জেরে এই খুন বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন সঞ্জিত। চিনাকুড়ি ২ নম্বর এলাকায় আততায়ীরা প্রথমে তাঁকে গুলি করে। তিনি মোটরবাইক থেকে মাটিতে ছিটকে পড়েন। এর পরে তাঁকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। গুলি চলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু সেখানে শুধু মোটরবাইকটি মেলে। আশপাশে রক্তের দাগ ছিল। ধন্দে পড়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে সঞ্জিতের দেহ উদ্ধার হয়।

Advertisement

মৃতের বড় ছেলে, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমিত পাসোয়ানের অভিযোগ, ‘‘এর আগেও এলাকার কয়েকজন বাবার উপরে হামলা চালিয়েছে। শত্রুতা থেকেই এমন ঘটেছে। পুলিশের কাছে সম্ভাব্য অপরাধীদের নাম জানিয়েছি।’’ সে জানায়, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ চিনাকুড়ি বাজারে চা খেতে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন সঞ্জিত। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রতিবেশীদের কাছে রাস্তার পাশে বাবার মোটরবাইক পড়ে থাকার খবর জানতে পারেন পরিজনেরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই চিনাকুড়ি ২ নম্বর বাজার এলাকায় নোনিয়া বস্তিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। সেখানে বিহারের জাহানাবাদ থেকে আসা বরযাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য রাতে নাচের আসর বসানো হয়। অভিযোগ, সেখানে অশালীন নাচগান চলছে দাবি করে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বাসিন্দা রাজকাপুর। কিন্তু আসর বন্ধ করতে চাননি বিয়েবাড়ির আয়োজকেরা। এর পরেই সেখানে দু’পক্ষের ধুন্ধুমার বেধে যায়। গুলিও চলে বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর মাস আটেক পরেই খুন হন রাজকাপুর। পুলিশ খুনে জড়িত অভিযোগে সঞ্জিতকে গ্রেফতার করে।

পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরে রাজকাপুরের পরিবার সঞ্জিতের সঙ্গে পুরনো বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছিল। সেই সংক্রান্ত বিষয়েই সোমবার চিনাকুড়ি বাজারে গিয়েছিলেন সঞ্জিত, দাবি পরিবার ও পড়শিদের একাংশের। নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন