আপেলে মাখা মোম, না জেনে খেয়ে ফেলছি অনেকেই

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের মতো জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে মোমের পালিশ করা আপেল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪০
Share:

দেদার বিকোচ্ছে মোমের প্রলেপ দেওয়া আপেল। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে।ছবি: বিশ্বনাথ মশান

আপেল এত চকচকে হয় কী করে! আপেল হাতে দিতেই সন্দেহ হয়েছিল ব্যাঙ্ককর্মী স্নিগ্ধা পালের। ছুরি দিয়ে উপরটা হাল্কা ঘষতেই গুঁড়ি গুঁড়ি মোম ঝরতে থাকে। তবে বাজারের সব ক্রেতা স্নিগ্ধাদেবীর মতো সচেতন নন। আপেলের সঙ্গে তাঁদের শরীরে ঢুকছে মাত্রাতিরিক্ত মোম। যা শরীরের জন্য মোটেও সুখকর নয়।

Advertisement

দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের মতো জায়গায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে মোমের পালিশ করা আপেল। ক্রেতারা অনেকেই বেশি দাম দিয়ে কিনছেন সেই আপেল। সাধারণ আপেল বাজারে গড়ে একশো টাকা কেজি। এই আপেলের দাম দ্বিগুণ। অথচ, রূপ দেখে ভুলছেন অনেকেই। ইনজেকশন দিয়ে তরমুজ, আনারসের রং বদলে দেওয়া, আনাজে সবুজ রাসায়নিক রং মেশানোর মতোই আপেলে মোমের পালিশও এখন সাধারণ ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বড়দের থেকে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি ছোটদের। কারণ, শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম। লিভারে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। খোসা-সহ ফল খেলে তা পরিপাকক্রিয়ায় সাহায্য করে থাকে। কিন্তু এই ধরনের আপেলের খোসা পেটে গেলে উল্টে হজমের সমস্যা তৈরি হবে। যদিও বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক আসিফ আলি আহমেদ বলেন, ‘‘নমুনার রাসায়নিক বিশ্লেষণ (‌কেমিক্যাল অ্যানালিসিস) না করে ঠিক কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তা বলা মুশকিল।’’

ফল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, আপেল আসে মূলত কলকাতা থেকে। পাইকারী ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে আপেল নিয়ে এসে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিক্রি করেন। বিদেশ থেকে আপেলগুলি আসে। মাস খানেক ধরে বাক্সে ভরা থাকে সেগুলি। যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, তাই মোম দিয়ে পলিশ করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন তাজা থাকে। তাঁদের অনেকেই জানেন এই আপেলের কুফল সম্পর্কে। কিন্তু তাঁদের স্পষ্ট কথা, ‘‘স্থানীয় বাজারে বিক্রি আটকাতে গেলে কলকাতার বাজারে এই আপেল ঢোকা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে চলতেই থাকবে।’’ ফল বিক্রেতাদের দাবি, ক্রেতাদেরও অনেকে চকচকে আপেল চান।

Advertisement

দুর্গাপুর, বেনাচিতি, মামরা, চণ্ডীদাস বাজারের বিভিন্ন ফলের দোকানে ঘুরে দেখা গিয়েছে একই ছবি। বহু বিক্রেতার কাছেই সাধারণ আপেল এখন দুয়োরানি। কারণ, সেগুলি সংরক্ষণ করে রাখতে সমস্যায় পড়তে হয়। অল্পেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে মোম পালিশ আপেল বিক্রি করার ঝক্কি কম। সহজে নষ্ট হয় না। এমন পরিস্থিতিতে ফল বিক্রেতাদের পরামর্শ, বেকিং সোডা ও পাতিলেবুর রস মেশানো হাল্কা গরম জল দিয়ে আপেল ধুয়ে নিতে হবে। এরপর ব্রাশ দিয়ে হাল্কা ঘষলেই মোম উঠে যাবে।

বছরদেড়েক আগে বর্ধমানে তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন তেঁতুলতলা বাজার ও বিসি রোডের বিভিন্ন ফলের দোকানে অভিযান চালিয়ে এমন বহু আপেল বাজেয়াপ্ত করে ফল বিক্রেতাদের সতর্ক করেছিলেন। তার দিনকয়েকের মধ্যেই পানাগড়ে আনারসের দোকানে হানা দিয়ে ফলের পিছনে গোলাপি রঙের রাসায়নিক দেখতে পান কাঁকসার বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাস। বিক্রেতারা অবশ্য দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ থেকে আনারসগুলি এ ভাবেই এসেছে। তাঁরা কিছু প্রয়োগ করেননি। দুর্গাপুরে চকচকে আপেলের রমরমার খবর শুনে মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা দ্রুত অভিযান চালানোর আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন