রক্তের জোগান বছরভর স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার রক্তদান শিবিরের ক্যালেন্ডার তৈরিতে উদ্যোগী হল।
স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত সচিব সৌমিত্র মোহন সম্প্রতি কলকাতার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক, রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের (সিএমওএইচ) চিঠি দিয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী আর্থিক বছরের রক্তদান শিবিরের পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার করে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাঁর দফতরে পাঠাতে হবে। ওই ক্যালেন্ডারে সাধারণ শিবির বাদে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জেলা হাসপাতাল পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মাসে এক বার করে রক্তদান শিবির করা বাধ্যতামূলক। কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক ও রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিকেও ওই নির্দেশ মানতে হবে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
স্বাস্থ্য-কর্তাদের ব্যাখা, ফি বছর গরমে, পরীক্ষা ও উৎসব-মরসুমে রক্তের হাহাকার চরমে পৌঁছায়। ভোটের সময়েও নানা কারণে স্বেচ্ছাসেবী-সহ বিভিন্ন সংগঠন রক্তদান শিবির করতে রাজি হয় না। এ ছাড়া, রক্তদান শিবিরের সুসংহত কোনও সময়সূচি থাকে না বলে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কে রক্তের জোগান নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গ যুক্ত কর্মীরা ও রাজ্য এডস্ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (স্যাক্স) দাবি, ওই সব সময়ে রক্তের জোগান প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। সঙ্কট কাটাতে অনেক ব্লাড ব্যাঙ্কে ‘বিনিময় প্রথা’ চালু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ভোগে মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর জেলা। স্যাক্স সূত্রেরই দাবি, রাজ্যে ফি বছর ১১ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। সেখানে রক্তদান শিবির ও ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে মেলে সাড়ে আট লাখ ইউনিট। বাকি রক্ত জোগাড় করতে মানুষকে হিমসিম খেতে হয়।
উত্তর দিনাজপুরের সিএমওএইচ প্রকাশ মৃধা বলেন, “স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বা রাজনৈতিক দলগুলি বিশেষ বিশেষ দিনে (যেমন, প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস) রক্তদান শিবিরে উৎসাহী থাকে। ফলে, সারা বছর রক্তের জোগান একই রকম থাকে না। দ্রুত ক্যালেন্ডার তৈরির জন্য সবাইকে নিয়ে বৈঠক করছি।” মুর্শিদাবাদের ডেপুটি সিএমওএইচ (২) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।” বর্ধমানের সিএমওএইচ প্রণব রায় মনে করেন, “এই নির্দেশের ফলে শুধু সংগঠন নয়, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী থেকে চিকিৎসক— সবাইকে রক্তদান শিবির করতে হবে।”
স্বাস্থ্য দফতরের ওই নির্দেশিকায় বলা রয়েছে, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ক্যালেন্ডারের বাইরে রক্তদান শিবির করা যাবে না। প্রয়োজনে সন্ধ্যাতেও শিবির করতে পারে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলি। রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম কর্মী দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “ক্যালেন্ডার তৈরি হলে একটা পরিকাঠামো গড়ে উঠবে। এই নির্দেশকে স্বাগত জানাচ্ছি।”
তবে রক্তদান আন্দোলনে জড়িত একটা বড় অংশের প্রশ্ন, কেবল নির্দিষ্ট দিনে রক্তদান শিবির করতে বাধ্য করলে উদ্যোক্তারা বেঁকে বসবেন না তো!