West Bengal Lockdown

নদ পেরিয়ে ঢোকার চেষ্টা বহু শ্রমিকের

মাইথন লাগোয়া দামোদরের কোমর-জল পেরিয়ে ভিন্-রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ এই রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৬
Share:

দামোদর নদ পারাপারের চেষ্টা। মাইথন ও ডুবুরডিহির মাঝে। নিজস্ব চিত্র 

প্রায় হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ‘ধরা’ পড়ে গেলেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার মহম্মদ ইজ়রায়েল। দুপুরের তপ্ত দামোদরের চরায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘‘যেতে দিন। বাড়িতে সবাই পথ চেয়ে আছে।’’ অপারগ পুলিশকর্মীরা বিস্কুটের প্যাকেট আর জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে আঙুল তুলে ইশারা করলেন ঝাড়খণ্ডের দিকে।

Advertisement

সম্প্রতি দৃশ্যটি দেখা যায় ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমানা, পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরের ডুবুরডিহিতে। কর্তব্যরত কল্যাণেশ্বরী ফাঁড়ির পুলিশকর্মীরা জানালেন, সড়ক পথে কড়া নজরদারি চলছে। করোনা-সতর্কতায় ‘সিল’ সীমানা পেরনো সম্ভব নয়। কিন্তু মাইথন লাগোয়া দামোদরের কোমর-জল পেরিয়ে ভিন্-রাজ্যে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ এই রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করছেন।

‘‘চেষ্টা না করে উপায় কি?’’— গামছায় ঘাম মুছতে থাকা ইজ়রায়েল প্রশ্ন করেন। জানান, উত্তরপ্রদেশের মাউ শহরে ফেরির কাজ করেন। ‘লকডাউন’-এর মেয়াদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পকেট ফাঁকা হয়ে যায়। ভাড়াবাড়ির মালিক দ্রুত ঘর ছাড়তে বলেন। পুলিশের নির্দেশে ঝাড়খণ্ডের দিকে ফিরে যাওয়ার মুহূর্তে তিনি বলেন, ‘‘প্রায় কিছুই খাইনি এই ক’দিন। টানা পাঁচ দিন সাইকেল চালিয়েছি। সীমানায় এসে শুনলাম পুলিশ সীমানা-সেতু পেরোতে দেবে না। তাই সাইকেল কাঁধে মিনিট ১৫ ধরে জল ডিঙিয়ে এ পারে ঢুকি। কিন্তু ধরা পড়ে গেলাম!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দিনভর ঘরবন্দি, বিকেলে চিঠি, পরিদর্শনের তালিকা পাঠাল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল

বিহারের মুঙ্গেরের বেসরকারি কারখানার এক শ্রমিক জানালেন, তিনি মুর্শিদাবাদের কান্দির বাসিন্দা। তাঁর দাবি, স্থানীয়দের সাহায্যেই নদ পেরিয়ে রাজ্যে ঢুকেছেন। কারণ, সেতুর পথে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া সম্ভব নয়।

পুলিশের নজর এড়াতে চাওয়া কেন? সীমানা পেরনো পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুলিশ ধরে ফেললে, হয়তো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে কোয়রান্টিনে পাঠাবে। এমনতেই পকেটে টান। তার মধ্যে এই পরিস্থিতি হলে সপরিবার না খেতে পেয়ে মারা যাব।”

দামোদর পেরিয়ে এ রাজ্যে ঢোকার চেষ্টা যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ করেছেন, তা জানতে পেরেছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটও। কমিশনারেট জানায়, এর পরেই দামোদর লাগোয়া এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চলছে ‘ড্রোন’-নজরদারিও। পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ভিন্-রাজ্য থেকে কাউকেই সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দিন তিনেক আগে দামোদর পেরিয়ে রাজ্যে ঢোকার সময়ে প্রায় ২৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দলকে আটকানো হয়। তাঁদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে ঝাড়খণ্ডের দিকে ফেরত পাঠানো হয়।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement