West Bengal Lockdown

ভাগীরথীর কাদায় গেঁথে থাকা পয়সা তোলার ‘ফাইট’

করোনা-সংক্রমণ রুখতে ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম কমে গিয়েছে। জমানো টাকায় টান পড়ছে।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪০
Share:

কাটোয়ায় ভাগীরথীর ঘাটে পয়সা কুড়োতে নামছেন অনেক যুবক। নিজস্ব চিত্র

ঠিক যেন মতি নন্দীর ‘কোনি’ গল্পের দৃশ্য। পুণ্য অর্জন করতে চেয়ে নদীতে ছুড়ে ফেলা অন্যের পয়সা তুলে আনার লড়াই। সে পয়সা ক’টা পেলে জুটে যাবে তেল-নুন-আনাজ। সুবিধে হবে পরিবারের। তবে কিশোরী ‘কোনি’ বা তার বয়সের কেউ নয়, এই ‘ফাইট’-এ যাঁরা নেমেছেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই যুবক। কেউ বা মাঝবয়সি। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায় ভাগীরথীর নানা ঘাটে পুণ্যার্থীদের ফেলে যাওয়া পয়সা কুড়োতে বাড়ছে এমনই কিছু মুখের ভিড়।

Advertisement

করোনা-সংক্রমণ রুখতে ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে যাওয়ায় কাজকর্ম কমে গিয়েছে। জমানো টাকায় টান পড়ছে। কবে আবার কাজ মিলবে, তা নিয়ে আশঙ্কাতেও ভুগছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে আশপাশের বাসিন্দাদের অনেকেই স্নান করতে এসে দীর্ঘক্ষণ নদী থেকে পয়সা খোঁজায় সময় কাটাচ্ছেন।

এত দিন কাটোয়ার নানা ঘাটে কিছু কিশোরকে নদীতে নেমে খেলার ছলে পয়সা তুলতে দেখা যেত। এখন তাদের পাশাপাশি, বেশ কিছু যুবক, মাঝবয়সীকেও জলে ডুব দিয়ে কাদায় গেঁথে থাকা পয়সা তুলে আনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা জানান, দুই থেকে শুরু করে পাঁচ-দশ টাকা, নানা কয়েন পাওয়া যাচ্ছে। ঘণ্টা তিনেক চেষ্টা করলেই ৫০-৭০ টাকা জোগাড় হয়ে যাচ্ছে। মাঝে-মধ্যে কেউ-কেউ শ’খানেক টাকাও পাচ্ছেন বলে দাবি।

Advertisement

কাটোয়া শহরের গঙ্গার নানা ঘাটে প্রতিদিন বহু মানুষ স্নান করেন। পূর্ব বর্ধমান ছাড়া, বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের নানা এলাকা থেকে লোকজন স্নান করতে আসেন। সংস্কারবশত অনেকেই নদীর জলে পয়সা ফেলেন। এই রীতি বহু দিন চলে আসছে। ‘লকডাউন’-এর সময়ে স্নান করতে আসা লোকজনের সংখ্যা কমলেও দেবরাজঘাট, শ্মশানঘাট, কালীবাড়িঘাট, বাজারঘাট-সহ নানা ঘাটে পয়সা কুড়নোর ভিড় বেড়েছে।

কাটোয়া শ্মশানঘাট লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা যুবক বিশ্বজিৎ সরকার, রাকেশ বিশ্বাস, পিন্টু মণ্ডলেরা বলছেন, ‘‘কম বয়সে আমরা নদীতে স্নান করতে এসে খেলার ছলে এ ভাবে পয়সা তুলতাম। দিনমজুরের কাজ করি। ‘লকডাউন’ চলায় কাজকর্ম বন্ধ। তাই নানা স্নানের ঘাটে গিয়ে এখন ডুব দিয়ে পয়সা তুলে আনছি। তাতে তেল, নুন ও আনাজের খরচ জুটে যাচ্ছে।’’ তাঁরা জুড়ছেন, ‘‘আগে এ ভাবে পয়সা তুললে, বাড়ির লোকজন ধমক দিত। এখন আর কেউ কিছু বলছে না।’’

কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরা ব্যাপারটা ইতিমধ্যে তাঁদের নজরে এনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে দীর্ঘ সময় গঙ্গায় ডুব জিয়ে পয়সা কুড়নো বিপজ্জনক। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের বারণ করা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ‘লকডাউন’-এর মধ্যে সরকারের তরফে মুশকিলে পড়া পরিবারগুলিকে সাহায্য করা হচ্ছে। কারও, কোনও সমস্যা থাকলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারেন।

বুক ভরে দম নিয়ে ডুব সাঁতার দিয়ে এ ভাবে জলের নীচে কাদায় গেঁথে থাকা পয়সা খোঁজার চেষ্টায় যে ঝুঁকি আছে, তা মানছেন বিশ্বজিৎ, রাকেশ, পিন্টুরা। তবে বলছেন, ‘‘পেটের দায় বড় দায়। এ লড়া সে জন্যই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement