জয়োল্লাস: দুর্গাপুরে তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস। ছবি: বিকাশ মশান।
বছর ঘুরতেই তৃণমূলের দখলে দুর্গাপুর। গত বিধানসভা ভোটে যে শহরের দু’টি আসনেই হেরেছিল তারা, এ বার সেখানে ৪৩-০ ফলে পুরসভা দখল করল শাসক দল। বিরোধীরা অবশ্য এই ফলের জন্য ‘লাগামছাড়া সন্ত্রাস’কে দুষেছে।
বিধানসভা ভোটে সমঝোতা করে বাম ও কংগ্রেস দুর্গাপুরে দু’টি আসন জিতে নেয়। তখন যে তৃণমূল মাত্র ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, পুরভোটে তারাই পেয়েছে ৭১ শতাংশ। বাম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোট ৪৯.৩ শতাংশ ছিল। এ বার ঘোষিত সমঝোতা ছিল না। দু’দলের ভোট জুড়লে দাঁড়াচ্ছে ১৩.৮ শতাংশে। ১৪.১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দু’নম্বরে উঠে এসেছে বিজেপি। বিধানসভার তুলনায় তাদের ভোট বেড়়েছে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ।
দেড় বছরের মধ্যে এমন উলট-পুরাণ কী ভাবে? তৃণমূল সূত্রের দাবি, বিধানসভা ভোটে হারের পরেই সংগঠন ঢেলে সাজার উদ্যোগ হয়। জেলা সভাপতি পদ থেকে সরানো হয় বিধানসভা ভোটে পরাজিত প্রার্থী তথা গত পুরবোর্ডের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে। নতুন করে গড়া হয় শহরে দলের সমস্ত কমিটি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস নানা ওয়ার্ডে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথাও শোনেন।
তৃণমূল শিবিরের খবর, এ বার প্রার্থী মনোনয়ন হয়েছে ‘ঝাড়াইবাছাই’ করে। গত বারের ‘বিতর্কিত’ ১৪ জন কাউন্সিলরের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। টিকিট না পেয়ে এলাকার যে সব নেতা ‘নির্দল’ হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, ‘বুঝিয়ে’ তাঁদের তা প্রত্যাহার করান তৃণমূলের উপরের সারির নেতারা। দুই বর্ধমান জেলার বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীকে শহরের এলাকা ভাগ করে ভোটের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শহরে টানা ঘাঁটি গেড়ে থেকে প্রচার চালান তাঁরা। তারই ফল মিলেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, প্রচার-পর্বে হুমকি-বোমাবাজি এবং ভোটের দিন বুথ দখল, দেদার ছাপ্পা ভোটের দৌলতেই সব ওয়ার্ডে জিতেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার গণনা বয়কটও করে বাম, বিজেপি ও কংগ্রেস। যদিও বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের একাংশের দাবি, বিধানসভা ভোটে জয়ের পরেও পুরভোটে আসন সমঝোতা নিয়ে মন কষাকষি, আইএনটিইউসি নেতৃত্বের প্রকাশ্যে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ানো-সহ নানা বিষয় দুই বিরোধী দলের বিপক্ষে গিয়েছে। বাম কর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, এলাকায় প্রার্থী চেনানোর কাজটুকুও করে উঠতে পারেননি দলের নেতারা। সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা এলাকার নেতা পঙ্কজ রায় সরকার অবশ্য বলছেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন করেছে তৃণমূল। আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই পুরসভাকে মডেল হিসেবে গড়ব।’’