ডিটিপিএস বাঁচাতে তৈরি মঞ্চ

শিল্পশহর দুর্গাপুরে বিদ্যুতের জোগান দিতে রাজ্য সরকার ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে তোলে। কিন্তু তা চাহিদা মেটাতে পারছিল না। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি মায়াবাজারে ডিটিপিএস গড়ে তোলে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২০
Share:

কারখানা বন্ধের কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি। তবু, যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যাবে দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন (ডিটিপিএস)— এই আশঙ্কা গ্রাস করেছে ওই কেন্দ্রের স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মী এবং এলাকার বাসিন্দাদের।

Advertisement

কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না ডিটিপিএস, এই দাবিতে একজোট হয়ে ‘নাগরিক মঞ্চ’ গড়েছেন দুর্গাপুরের মায়াবাজার, পুরষা, অঙ্গদপুর, অর্জুনপুর-সহ আশপাশের এলাকার মানুষজন। শ্রমিক সংগঠন সিটু এবং আইএনটিইউসি-ও একই দাবিতে মিশ্র ইস্পাত কারখানার (এএসপি) ধাঁচে যৌথ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শিল্পশহর দুর্গাপুরে বিদ্যুতের জোগান দিতে রাজ্য সরকার ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে তোলে। কিন্তু তা চাহিদা মেটাতে পারছিল না। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ১৯৬৬ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ডিভিসি মায়াবাজারে ডিটিপিএস গড়ে তোলে। প্রথম পর্যায়ে দু’টি ৭৫ মেগাওয়াট এবং একটি ১৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইউনিট চালু হয়। ১৯৮২ সালের সেপ্টেম্বরে ২১০ মেগাওয়াটের চতুর্থ ইউনিট চালু করা হয়। কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে ১৯৮৫ সালে প্রথমে দু’টি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

Advertisement

পরের দিকে তৃতীয় ইউনিটটিও বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এখন কোনও রকমে চালু আছে চতুর্থ ইউনিটটি। মাস দুয়েকের মধ্যে সেটিও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা ওই কারখানার কর্মীদের। কারণ, ইউনিটটি চালু রেখে লোকসান হচ্ছে। তা ছাড়া অন্ডালে ডিভিসি-র নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। এক মাত্র চালু ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে গেলে প্রকল্পটিই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে।

ডিভিসি সূত্রের খবর, এ বছর জুনের শেষে কলকাতায় সংস্থার সদর দফতর ‘ডিভিসি টাওয়ার’-এ চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ২৫ বছরের পুরনো ইউনিটগুলিকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কোনও ভাবে সেই খবর ছড়িয়েই গোটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন ডিটিপিএসের প্রায় ৮০০ স্থায়ী ও ৬০০ অস্থায়ী কর্মী। কর্মীদের আশঙ্কা, স্থায়ীদের হয়তো কোথাও স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু, অস্থায়ী কর্মীরা কাজ হারাবেন। এর সার্বিক প্রভাব পড়বে দুর্গাপুরের অর্থনীতিতে। তাই শুধু কর্মীরাই নয়, প্রকল্পটি বন্ধ করার বিপক্ষে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি।

ডিভিসি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, প্রতিযোগিতার বাজারে সংস্থাকে টিকে থাকতে গেলে প্রয়োজনে উৎপাদনে রাশ টানা জরুরি। বিদ্যুতের চাহিদা, কয়লার জোগান-সহ নানা অবস্থা বিবেচনা করে মাঝেমাধ্যেই নানা প্রকল্পে এক বা একাধিক ইউনিট বন্ধ রাখতে হয়। তবে, দুর্গাপুরের প্রকল্প গুটিয়ে ফেলার কোনও সরকারি নির্দেশিকা এখন পর্যন্ত জারি হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের শঙ্কা তাতে কাটছে না। নাগরিক মঞ্চের ব্যানারে স্থানীয় বাসিন্দারা ইতিমধ্যেই কারখানা বাঁচাতে পথে নেমেছেন। বুধবার তাঁরা মায়াবাজারে ডিটিপিএসের গেটের সামনে দিয়ে বড় মিছিলও করেন। তাতে সামিল হয়েছেন দুর্গাপুরের মেয়র দিলীপ অগস্তি। তিনি ডিভিসি কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ না করার আর্জি জানিয়েছেন। নাগরিক মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক, তৃণমূল কাউন্সিলর স্বরূপ মণ্ডল বলেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় বাসিন্দারা কারখানা বাঁচাতে আন্দোলনে নেমেছেন।’’

কেন্দ্রীয় সরকার দুর্গাপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এএসপি-র কৌশলগত বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে তা রুখতে বছরখানেক ধরে একজোট হয়ে আন্দোলন চালাচ্ছে সিটু ও আইএনটিইউসি। সিটুর পক্ষে গোপালচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘ডিটিপিএস বন্ধ করা রুখতে নাগরিক মঞ্চের পাশাপাশি ট্রেড ইউনিয়নগুলিও যৌথ ভাবে আন্দোলনে নামার জন্য আলোচনা শুরু করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন