রাজ্যের ‘শস্যভান্ডার’ বর্ধমানের বির্স্তীণ এলাকা জুড়ে আলুর চাষ হলেও জেলায় আলুভিত্তিক কোনও শিল্প না থাকায় সমস্যায় পড়ছেন আলুচাষিরা। বাড়তি উৎপাদন হলেও হিমঘরে পড়ে নষ্ট হচ্ছে আলু।
জেলা কৃষি দফতর ও আলুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বর্ধমান জেলায় মূলত জ্যোতি আলুর চাষ হয়। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে জেলায় ৭২ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ২২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন আলু। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরেও এর আশপাশেই আলু উৎপাদন থাকার কথা। কিন্তু বাড়তি উৎপাদন সত্ত্বেও বেশির ভাগ সময়েই আলুর দাম না মেলায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন আলুচাষিরা। চাষিরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়েও তৈরি হয় সমস্যা। জেলার আলুচাষিদের আক্ষেপ, চলতি মরসুমে অকাল বৃষ্টি ও নাবিধসা রোগে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০৪ কোটি টাকার আলু নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলায় যদি আলুভিত্তিক শিল্প থাকত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ হয়ত এত বেশি হত না।
জেলায় আলুভিত্তিক শিল্প তৈরির জন্য আলুচাষিদের দাবি দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি কালনা শহরের পুরশ্রী মঞ্চের অ্যানেক্স হলে জেলার আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের কর্তা রাজীব সিংহ। কালনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড স্মল ইন্ড্রাস্টির উদ্যোগে হওয়া এই বৈঠকে আলু ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত আলু ব্যবসায়ীরা রাজীববাবুর কাছে জেলায় আলুভিত্তিক শিল্প তৈরির দাবি জানান।
মেমারির আলুচাষি প্রদীপ সর্দারের আক্ষেপ, “অনেক সময়েই আলু হিমঘরে জমিয়ে রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে হিমঘরের ভাড়াও গুনতে হয়। জেলায় যদি আলুভিত্তিক কোনও শিল্প থাকত, তাহলে বাড়তি আলু সেখানে ব্যবহার করা যেত।” কালনা-১ ব্লকের আলুচাষি পরিতোষ মজুমদার বলেন, “ধান, সরষে প্রভৃতি ফসলকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু শিল্প গড়ে উঠলেও জেলায় আলুকে কেন্দ্র করে কোনও শিল্প না থাকায় অনেক সময়েই আলু নষ্ট হয়ে যায়।”
জেলায় আলু ভিত্তিক কোনও শিল্প গড়ে না ওঠার কথা স্বীকার করে নিয়ে কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “আলু থেকে স্টাট পাউডার (পাউরুটি তৈরিতে লাগে), চিপসের মত জিনিস তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ব্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” আলুভিত্তিক শিল্প না থাকার কথা স্বীকার করেছে জেলা পরিষদ। জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “চাষিদের সুবিধার জন্য জেলায় আলু ভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলার জন্য আমরা চেষ্টা করব।”
ইতিমধ্যেই আলুর খোসা থেকে কী শিল্প হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে জানিয়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “বর্ধমানে আলু ভিত্তিক শিল্পের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এই দাবিটি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”