বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজের আসন সংখ্যা অর্ধেক করে দেওয়ার নির্দেশ মেলায় তড়িঘড়ি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল দুর্গাপুরের দুই বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষ। আপাতত শাস্তিতে স্থিতাবস্থা ঘোষণা হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁরা। শুক্রবার কলেজের কলেজের ডিরেক্টর (প্রশাসন) অহীন্দ্রচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ হাতে পেয়েছি। বি টেক-এর আসন সংখ্যা কমছে না।’’
দুর্গাপুরের বিধাননগরের শহিদ সুকুমার ব্যানার্জি সরণিতে ২০০১ সালে গড়ে ওঠে ‘বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ (বিসিইটি) নামে ওই কলেজ। ২০০৯-এ শুধু ছাত্রীদের জন্য আর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বিসিইটিডব্লিউ) গড়ে তোলেন কর্তৃপক্ষ। গত শিক্ষাবর্ষে ওই দুই কলেজে শিক্ষকদের একাংশকে স্টেশন থেকে পড়ুয়া ধরে আনার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। এর সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহার, নির্দিষ্ট সময়ে বেতন না দেওয়া, আগাম নোটিস ছাড়া চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা-সহ নানা অভিযোগে গত বছর অগস্টে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা না মেটায় শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করেন।
অন্যায় ভাবে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে দাবি করে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষকেরা। দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায়, বর্ধমানে জেলাশাসকের দফতরে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন তাঁরা। শেষে কলকাতায় কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি) সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষকেরা। ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গড়ার কথা ঘোষণা করা হলে অনশন প্রত্যাহার করেন তাঁরা। সেই কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখতে ২৭ মে ও ১৮ জুন এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকে বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দুই কলেজের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, চলতি শিক্ষাবর্ষে দুই কলেজে স্নাতক স্তরের আসন সংখ্যা ৫০ শতাংশ করে কমিয়ে দেওয়া হবে। এরই প্রতিবাদে হাইকোর্টে যায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, এখন ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। এমন সময়ে আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার খবরে পড়ুয়াদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, পড়ুয়া বা অভিভাবকদের তরফে কলেজের পঠনপাঠন নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাছাড়া আইনের যে ধারায় আসন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে তা করা যায় না। সবদিক বিবেচনা করে বিচারক নির্দেশ দেন, অগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করা যাবে না। আপাতত স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। কলেজের ডিরেক্টর (প্রশাসন) অহীন্দ্রচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘দুই কলেজের পঠন-পাঠনের মান অত্যন্ত উন্নত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফলেই তা প্রমাণিত।’’ তাঁর দাবি, শিক্ষকদের অনড় আন্দোলনে পঠন-পাঠন স্বাভাবিক রাখতে কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার কোনও ছাপ পঠনপাঠনে পড়তে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের অর্ন্তবর্তী নির্দেশে আসন সংখ্যা কমছে না। আগের মতোই এই দুই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে পড়ুয়ারা।’’