কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা কৃপাসিন্ধু সাহা খুনের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল সোমবার থেকে। এ দিন ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কেতুগ্রাম ১ ব্লকের তৎকালীন কার্যকরী সভাপতি হারা শেখ ও তার সঙ্গী চাঁদ শেখকে আদালতে চিনিয়ে দেন প্রত্যক্ষদর্শী ও খুনের ঘটনার অভিযোগকারী তারাশঙ্কর পণ্ডিত।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক, বছর বিয়াল্লিশের কৃপাসিন্ধু সাহা খুন হন ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি। তিনি মোটরবাইক চালিয়ে স্থানীয় মালগ্রাম থেকে কান্দরায় ফেরার পথে ঘটনাটি ঘটেছিল। তাঁর মোটরবাইকে আরোহী ছিলেন কান্দরা গ্রামেরই তারাশঙ্করবাবু। তিনি নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করে পুলিশের কাছে হারা শেখ, চাঁদ শেখ ও আশাদুল্লা শেখের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
এ দিন বর্ধমান জেলার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (কাটোয়া) শুভ্রজ্যোতি বোসের এজলাসের সাক্ষী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারাশঙ্করবাবু বিশদে ঘটনা জানান। আদালতে ‘আলামত’ (ঘটনাস্থল থেকে বাজেয়াপ্ত জিনিসপত্র) না আসায় অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবীদের জেরা স্থগিত রাখেন বিচারক। তিনি কোর্ট ইন্সপেক্টরকে আজ, মঙ্গলবার ‘আলামত’ আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অতিরিক্ত দায়রা বিচারকের এজলাসের সাক্ষী কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারাশঙ্করবাবু এ দিন দাবি করেন, সে দিন বিকেল পৌনে ৩টে নাগাদ কৃপাসিন্ধুবাবুর সঙ্গে মোটরবাইকে চড়ে মালগ্রাম থেকে মোরাম রাস্তা ধরে কান্দরা ফিরছিলেন। মালগ্রাম সাইফোনের কাছে ৪ জন রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিল। তারাশঙ্করবাবুর কথায়, “কাছে যেতেই হারা শেখ, আশাদুল্লা শেখ ও চাঁদ শেখকে চিনতে পারি। আর এক জনকে চিনতে পারিনি।” আদালতে তারাশঙ্করবাবু দাবি করেন, চাঁদ শেখ গাছের ডাল দিয়ে কৃপাসিন্ধুবাবুকে মারে। মোটরবাইক থেকে ছিটকে তাঁরা পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, “ওরা বলে, আজই তোর শেষ লিডারগিরি। তার পরে আশাদুল্লা পিস্তল বের করে গুলি চালায়। কৃপাদার বাঁ হাতে লাগে। তার পরে হারা শেখ গুলি করে। কৃপাদার মাথায় লাগে। ওই দেখে আমি প্রাণ ভয়ে ছুটতে শুরু করি। আমাকে চাঁদ শেখ গাছের ডাল ও ছুরি নিয়ে তাড়া করে। গাছের ডাল দিয়ে আমাকে মারে। আমি কোনও রকমে হাট মুরগ্রামে ঢুকে পড়ি। তার পরে লোকজন নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় মৃতদেহটি পড়ে রয়েছে।” তিনি আদালতে দাবি করেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’টি কার্তুজ, রক্ত মাখা মাটি-সহ বেশ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছিল।
সরকারি আইনজীবী তাপস মুখোপাধ্যায় জানতে চান, অভিযুক্ত তিন জনের মধ্যে কেউ আদালতে আছে কি না? সাক্ষী কাঠগড়া থেকে তারাশঙ্করবাবু জানান, আসামীর কাঠগড়ায় হারা শেখ ও চাঁদ শেখ রয়েছে। পুলিশ জানায়, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চাঁদ শেখ ও অক্টোবরে হারা শেখকে গ্রেফতার করা হয়। আর এক অভিযুক্ত আশাদুল্লা শেখকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।