আঁধার-পথে। ছবি: বিকাশ মশান।
বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। কিন্তু আলো জ্বলে না। দুর্গাপুর পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে দেখা মিলছে এমনই ছবি। বর্ষায় রাস্তার অবস্থা এমনিতেই বেহাল। তার উপর প্রায় অন্ধকার ওই রাস্তাগুলি দিয়ে যাতায়াত করাটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা।
১৯৯৭ সালে মোট ৪৩টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি হয়েছিল দুর্গাপুর পুরসভা। তার আগে এই এলাকা ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ বলে চিহ্নিত ছিল। সিটি সেন্টার, বিধাননগরের মতো শহুরে অভিজাত এলাকার পাশাপাশি এই পুর এলাকায় রয়েছে কয়েকটি গ্রামীণ এলাকা। শহর এলাকায় মোটের উপর রাস্তার পাশে পথ বাতি থাকলেও গ্রামের অনেক রাস্তাতেই সন্ধে নামলেই গাঢ় হয় আঁধার। সামনের গাড়ির তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার আশপাশের রাস্তায় এই সমস্যা সব থেকে বেশি।
দুর্গাপুর পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বন্ধ জেসপ কারখানার পাশেই রয়েছে সঞ্জীব সরনী রোড। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেসপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু দিন পরেই ওই রাস্তার পাশের পথ বাতিগুলির বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়। চুরি হয়ে যায় আলো। বর্তমানে লোহার খুঁটিগুলি ঢেকে গিয়েছে আগাছা ও ঝোপে। পড়েছে মরচে। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বম্ভর সাহা। তাঁর দাবি, “ওই রাস্তার বিদ্যুতের সংযোগের তার দুষ্কৃতীরা চুরি করে নিয়েছে। পুরসভার সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”
ওই এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, “রাস্তার পাশে ঝোপ-জঙ্গলও বেড়ে উঠেছে। অন্ধকার রাস্তায় চলাফেরা করাই দায় হয়ে উঠেছে।” ডিভিসি মোড় থেকে এমএএমসি মোড় যাওয়ার রাস্তারও অবস্থা প্রায় একই। রাস্তার পাশে কয়েরটি পথ বাতি লাগানো হলেও বেশির ভাগ অংশই ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। এই রাস্তা উজিয়ে যাতায়াত করা গাড়ির সংখ্যা বেশ বেশি। ফলে আলো না থাকার জন্য প্রায়ই বিপদ ঘটছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা খোকন মল্লিক, রায়না বেগমরা জানান, এই রাস্তার পাশে পথ বাতির ব্যবস্থা করেছিল এমএএমসি কারখানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই আলো নিভে যায়।
দুর্গাপুর শহর ও তার আশপাশে গড়ে উঠেছে ঝা চকচকে শপিং পল, হোটেল, পার্ক। কিন্তু শহর থেকে বেরোলেই রাস্তার এই হাল কেন? এই বিষয়ে তৃণমূল পরিচালিত দুর্গাপুর পুরসভাকেই দায়ী করছে বিরোধীরা। বিজেপির দুর্গাপুর ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি কল্যাণ দুবের অভিযোগ, “বামফ্রন্ট যখন দুর্গাপুর পুরসভার ক্ষমতায় ছিল তখনও এই বিষয়ে ভাবা হয়নি। তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডও কিছু করেনি। এই নিয়ে আমরা শীঘ্রই আন্দোলনে নামব।” দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের সিটু অনুমোদিত পরিবহন সংগঠনের নেতা সলিলকুমার বোসের ক্ষোভ, “এই রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যার পরে যাতায়াত করতে ভয় হয়।” আলো-সমস্যা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও ক্ষুদ্ধ। স্থানীয় তৃণমূল নেতা চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশঙ্কা, “অন্ধকার রাস্তায় দুর্ঘটনা ছাড়া চুরি, ছিনতাইও হতে পারে। বাম পুরবোর্ড কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। আশা করি আমাদের পুরবোর্ড বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।” সমস্যার কথা স্বীকার করে দুর্গাপুর পুরসভার বিদ্যুৎ দফতরের মেয়র পারিষদ মধুসূদন মণ্ডল বলেন, “পুরসভার পক্ষ থেকে কয়েকটি এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে আলো নেই সেখানেও দ্রুত আলোর ব্যবস্থা করা হবে।”