গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাগীরথীতে গা ডুবিয়ে বসে থাকে ছেলেটি। শীতেও বারবার গায়ে জল না ঢাললে জ্বালা মেটে না তার। ১২ বছর বয়সে ১০০ কেজিরও বেশি ওজন নিয়ে এমনই হাল সমুদ্রগড়ের আনোয়ার শেখের। তাঁর পরিবারের দাবি, রাতে শুকনো মুড়ি খেয়েও প্রতি মাসেই ওজন বেড়ে যাচ্ছে। হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়ায় আপাতত কালনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাকে।
আনোয়ারের পরিবারের দাবি, পাঁচ মেয়ের পরে ছেলের জন্ম। জন্মের সময় স্বাভাবিক ওজনই ছিল তার। কিন্তু তিন বছর বয়স হতেই ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে। সাত বছরেই ওজন ষাট কেজি ছুঁয়ে ফেলে। এগারোয় পা দিতে ওজন হয় একশো। তখন থেকে নানা সমস্যাও দেখা যায়। সমুদ্রগড়ের ডাঙাপাড়ার বাসিন্দাদেরও দাবি, ভোর হলেই নদীতে ছোটে আনোয়ার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে ডাকাডাকিতে উঠে আসে। শীতেও কলসি ভরে জল ঢাকতে থাকে গায়ে। তা ছাড়াও ওজনের ভারে প্রাথমিকের গণ্ডী থেকেই স্কুলে হেঁটে যেতে অসুবিধে হতো তার। শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। বাধ্য হয়ে ছেলের স্কুল ছাড়িয়ে দেন বাবা আকাশ নবি শেখ। তেলেভাজা ব্যাবসায়ী আকাশ শেখের দাবি, কয়েক বছর ধরে বহু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছি। খাওয়া কম করেও ওজন কিন্তু কমেনি। আনোয়ারের মায়েরও দাবি, অন্যদের তুলনায় খুব একটা বেশি খায় না ছেলে। কয়েক বছর ধরে রাতে শুকনো মুড়ি খায়। তাতেও ওজন কমছে না। বরং দিনে দিনে অসুবিধে বাড়ছে বলেই তাঁর দাবি। আকাশও বলে, ‘‘রাতে ঘুমোতে পারি না। পাশ ফিরতেও অসুবিধে হয়। শুধু সারা গা জ্বালা করে।’’
তবে কালনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আকাশের রোগ ধরতে পারেনি। সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই বলেন, ‘‘ওর শরীরের নানান অংশ খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। চেষ্টা করছি ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার।’’ বুধবার কালনা হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে আনোয়ারের সঙ্গে কথা বলেন ১০ সদস্যের বিধায়কদের একটি দলও। তাঁরাও পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
আর হাসপাতালের বিছানায় বসে আনোয়ার বলে, ‘‘আমি ভালো হতে চাই। আবার স্কুলে ফিরতে চাই।’’