কোথাও কল আছে, কিন্তু জল পড়ে না। আবার কোথাও কল থেকে জল পড়ে বটে, কিন্তু যথেষ্ট অনিয়মিত। গরমে তাপমাত্রার পারদ যখন প্রতিদিনই বাড়ছে তখন এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন জামুড়িয়ার বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জামুড়িয়ার হুবডুবি, রাজারামডাঙা, তেলিপাড়া, বাউড়িপাড়ার কিছু এলাকা-সহ বির্স্তীণ এলাকায় জলের কল থাকলেও সেখান দিয়ে জল পড়ে না। স্থানীয় বাসিন্দা বাবন বাগদির অভিযোগ, ইকড়ার অন্য পাড়া, চণ্ডীপুর ও যদুডাঙা এলাকায় নিয়মিত জল মেলে না। কখনও জল আসে রাত বারোটার পরে। জামুড়িয়া বড়তলায় জল আসছে ২-৩ দিন অন্তর। মুণ্ডাপাড়া এলাকাটি উঁচু জমিতে হওয়ায় জন্য এখানে জল উঠছে না। কুষ্ঠ কলোনি এলাকায় রয়েছে একটি মাত্র কল। ফলে সেখানে কলে জল এলে লম্বা লাইন পড়ে। অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েও জল পান না। একই ছবি নিঘা বাজার, নিঘা ইমলিধাওড়া, জামুড়িয়া বাজার, বাইপাস মুসলিম মহল্লাতেও।
উল্টো চিত্রও অবশ্য রয়েছে। কেন্দুলিয়া জলাধারের সামনের একটি কলে ২৪ ঘণ্টাই জল পড়ে। কিন্তু ওই জলাধার থেকে অন্য কোনও এলাকায় জল যায় না। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ সাউ, মহম্মদ জুনেদদের অভিযোগ, পাইপলাইনে ছিদ্র করে ওই জলাধারের জল সামনের একটি পুকুরে অবৈধ উপায়ে ফেলা হচ্ছে। ওই জল ব্যবহার করে একটি ইটভাটা চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সব জেনেও নির্বিকার প্রশাসন।
জামুড়িয়ার পঞ্চায়েত এলাকা কেন্দা, খাসকেন্দা, চিচুড়িয়া, তপসি, বাহাদুরপুরে কোনও দিন দুপুর আড়াইটের সময় জল আসে, কোনও দিন আবার সন্ধ্যা ছটায়। এই জলও প্রতিদিন মেলে না। বালানপুরে একটি জলাধার দীর্ঘদিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অমিত বাউড়ি জানান, গ্রামের জলাধারটি খারাপ থাকার জন্য জলাধারে জল আসার সময়ে তাঁদের জলাধারের মূল পাইপ থেকেই জল নিতে হয়। পড়শিয়া, তালতোড় ও সত্তরে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের কোনও কলই নেই। তৃণমূল পরিচালিত জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাত্ত্বনা মণ্ডল বলেন, “খনি এলাকা হওয়ায় শীতের শুরুতেই এখানে জলস্তর নামতে শুরু করে। গরমকালে সেটা প্রবল আকার নেয়। তাই টিউবওয়েলের সংখ্যা বাড়ালেও কোনও লাভ হবে না। সমস্যা মেটাতে এ বার আমরা পঞ্চায়েত সমিতি থেকে বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের গাড়ি পাঠাচ্ছি।” তাঁর অভিযোগ, বিগত বাম সরকারের আমলে সমীক্ষা না করে জল প্রকল্পের কাজ হওয়াতেই সমস্যা বেড়েছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট জলপ্রকল্প তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি। পুরসভা সূত্রের দাবি, জামুড়িয়ার কিছু এলাকার জমি উঁচু হওয়ায় কলে জল উঠছে না। সিপিএম পরিচালিত জামুড়িয়া পুরসভার পুরপ্রধান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এলাকায় জলের সমস্যা রয়েছে। আমরা সেটা মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।”
জল সমস্যা বাড়তে থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই নিয়মিত জল সরবরাহের দাবিতে বেশ কয়েকবার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। বাসিন্দাদের দাবি, জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনও লাভ হয় না। জল সমস্যা না মিটলে গণ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা।