সিমেন্টের চাঙর খসেছে অঘোরনাথ পার্কের গ্যালারির। —নিজস্ব চিত্র।
সিমেন্ট-বালির আস্তরণ খসে লোহার শিক বেরিয়ে গিয়েছে রেলিংয়ের। ভাঙা গ্যালারিতে বসে খেলা দেখাটাই ঝকমারি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্কারের টাকাও বরাদ্দ হয়েছে। তবু কাজ শুরু হয়নি কালনা মহকুমার একমাত্র স্টেডিয়াম, অঘোরনাথ পার্কের।
চার দশক পুরনো স্টেডিয়ামটির তিন দিকে রয়েছে উঁচু গ্যালারি। সবমিলিয়ে লোকও ধরে হাজার দশেক। কিন্তু গ্যালারিতে ওঠার সিঁড়ির অবস্থা বেহাল। এমনিতেই সারা বছরই নানা খেলা চলে এই স্টেডিয়ামে। রাজনৈতিক দলের জনসভা এবং অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানও হয়। আপাতত কালনা মহকুমা ফুটবল লিগ চলছে স্টেডিয়ামটিতে। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা এবং পুরক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া অনেক দলই বড় বাজেটের দলও গড়েছেন। লকাতার নামী ফুটবল তারকাদের দেখতে ভিড়ও হচ্ছে স্টেডিয়ামে। প্রায়দিনই দুপুর হলেই হাজার হাজার মানুষ মাঠমুখো হচ্ছেন। অথচ সেই স্টেডিয়ামের কোনও সংস্কার হয়না বলেই অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের।
তাঁদের দাবি, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গ্যালারিগুলির বেহাল দশা। অজস্র জায়গায় লম্বা ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে সিমেন্টের চাঁই। তবে সব থেকে বিপ্পজনক দশা মাঝের গ্যালারিটির। এই গ্যালারির সামনে লোহার রেলিংয়ের নীচে সিমেন্টের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। ফলে হাত ছোঁয়ালেই বিপজ্জনক ভাবে নড়ছে রেলিংটি। স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা গিয়েছে ভিড়ের মধ্যে অনেকেই এ দিক দিয়ে দ্বিতীয়ত গ্যালারিতে আসাযাওয়া করছেন। ফলে যে কোনও সময় রেলিং ভেঙে প্রায় ১২ ফুট উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে দর্শকদের। এ ছাড়াও মাঝের গ্যালারি থেকে প্রথম গ্যালারিতে যাওয়ার রাস্তাটির পাঁচিলও বিপজ্জনক বলে দাবি শহরের ক্রীড়াপ্রেমীদের। এমনকী খেলা চলার মাঝেও উচ্ছ্বাসে লাফিয়ে ফেললেও তাঁরা আতঙ্কে ভোগেন বলে দাবি দর্শকদের।
এক মাঝবয়সী দর্শক পরেশ সরকার যেমন বলেন, ‘‘দ্বিতীয় গ্যালারির ফাটল ক্রমশ বাড়ছে। স্টেডিয়ামের সামনে বসে খেলা দেখতে ভয় করে। দ্রুত এই গ্যালারির মেরামতি দরকার।’’ আর এক দর্শক রবি সমাদ্দার জানান, মহকুমা ক্রীড়া লিগে খেলা দেখতে আসা মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ভিড়ের চাপে যাতে বিপদ না ঘটে তার জন্য স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের আগাম সাবধান হওয়া উচিত। উল্লেখ্য, বছর তিনেক আগে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নতির আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই মতো পূর্ত দফতর স্টেডিয়ামের পরিকাঠামো উন্নতির ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে ক্রীড়া দফতরে পাঠায়। ক্রীড়া দফতর স্টেডিয়ামটি নিজেদের হাতে নেওয়ার পরে সংস্কারের জন্য সরকারি অর্থও বরাদ্দ হয়। কিন্তু কাজ শুরু না হওয়ায় পরেই রয়েছে সেই ৬ কোটি টাকা।
কবে কাজ শুরু হবে তা বলতে পারেননি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারাও। সংস্থার সম্পাদক নরুল চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই টাকায় স্টেডিয়ামে কবে কাজ শুরু হবে জানা নেই। তবে স্টেডিয়ামের যে গ্যালারিটি বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে তা অস্থায়ী ভাবে আমরা মেরামতি করার চেষ্টা করছি।’’ দ্রুত কাজ শুরুর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করা হবে বলেও তাঁর আশ্বাস। তবে কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষের বক্তব্য, ‘‘অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের জন্য বরাদ্দ অর্থ জেলায় চলে এসেছে। খুব শীঘ্র ওই অর্থ আমার অ্যাকাউন্টে এসে যাবে। টাকা পৌঁছনোর পরেই কাজ শুরু করবে পূর্ত দফতর।’’ তাঁর আশা, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।