টাকার অভাবে জৌলুস হারিয়েছে হরগৌরী পুজো

চৈতন্য পরবর্তী সময়ের এই মন্দিরটিকে ঘিরে কাটোয়া শহরে গড়ে উঠছে একটি আস্ত পাড়া। কিন্তু দুর্গা পুজোর সময় এই মন্দিরকে ঘিরে জৌলুস সময়ের ফেরে এখন শুধুই স্মৃতি। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে পাড়ার লোক সাহায্য না করলে পুজো হওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ে কাটোয়ার হরগৌরী মন্দিরে। মন্দিরের হর অর্থাৎ শিবের শ্বেত পাথরের মূর্তিটি তৈরি করেন বিশিষ্ট শিল্পী নবীন ভাস্করের বংশধর, দাঁইহাটের বাসিন্দা গোকুলবিহারী ভাস্কর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৫
Share:

হরগৌরী মূর্তি। নিজস্ব চিত্র।

চৈতন্য পরবর্তী সময়ের এই মন্দিরটিকে ঘিরে কাটোয়া শহরে গড়ে উঠছে একটি আস্ত পাড়া। কিন্তু দুর্গা পুজোর সময় এই মন্দিরকে ঘিরে জৌলুস সময়ের ফেরে এখন শুধুই স্মৃতি। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে পাড়ার লোক সাহায্য না করলে পুজো হওয়ায় কঠিন হয়ে পড়ে কাটোয়ার হরগৌরী মন্দিরে।

Advertisement

মন্দিরের হর অর্থাৎ শিবের শ্বেত পাথরের মূর্তিটি তৈরি করেন বিশিষ্ট শিল্পী নবীন ভাস্করের বংশধর, দাঁইহাটের বাসিন্দা গোকুলবিহারী ভাস্কর। অষ্টধাতুর গৌরী অর্থাৎ দুর্গা মূর্তিটিও গোকুলবিহারীবাবুই তৈরি করেন। মন্দিরের বর্তমান সেবাইত শৈলেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃত পণ্ডিত হরিকিশোর ভট্টাচার্য। তিনিই মন্দির ও আটচালা তৈরি করেন। হরিকিশোরবাবু নিঃসন্তান হওয়ায় তাঁর দৌহিত্র এবং রায়চৌধুরী পরিবারের পূর্ব-পুরুষ অবিনাশ রায়চৌধুরীর উপর পুজোর দায়িত্ব বর্তায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হর- গৌরী মন্দিরের পুজো পারিবারিক হলেও বাস্তবে তা সর্বজনীন ছিল। মন্দিরের আলোক সজ্জা থেকে পুজোর চারদিন পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ, বিজয়ার দিনে পাড়ার মহিলাদের সিঁদুর খেলা - এ সবই ছিল মন্দির চত্বরের চেনা দৃশ্য। যদিও মন্দিরে এখনও নিত্য পুজোর আয়োজন করা হয়।

Advertisement

হরগৌরি পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্যনারায়ণ দত্ত বলেন, “যে মন্দিরকে ঘিরে জনবসতি গড়ে উঠল, সেই মন্দিরই এখন ধুঁকছে।” শৈলেন্দ্রবাবু জানান, ২০০৪ সাল পর্যন্ত টোল ও ভাতার টাকায় পুজোর কাজ চলছিল কোনও রকমে। কিন্তু ভাতা বন্ধ হতেই পুজোও ধুঁকতে শুরু করল। শৈলেন্দ্রবাবুর স্ত্রী অঞ্জলিদেবীও পুজোর ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কিত, “আমার একমাত্র ছেলে মানসিক ভাবে অসুস্থ। এরপর পুজোর দায়িত্ব কে নেবে জানি না।” রায়চৌধুরী পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুর্গার পুজো তান্ত্রিক মতে হওয়ায় আগে নিয়মিত পাঁঠা বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। কিন্তু এখন আর্থিক সঙ্গতির অভাবে, বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন ভোগ হিসেবে শুধুই বিভিন্ন মাছ দেওয়া হয়। শৈলেন্দ্রবাবু আক্ষেপ, “পুজো চালানোর জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। কিন্তু আমাদের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় শহরের বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে পুজো করতে হয়। কিন্তু এই ভাবে আর কত দিন টিকিয়ে রাখা যাবে?” স্থানীয় যুবক শঙ্কর দাস জানান, পাড়ার ছেলেরাও পুজোটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সাধ্যমত সাহায্য করেন।

শুধু তাই নয়, মন্দিরের এই দুরাবস্থাকে কাজে লাগিয়ে রাত বাড়তেই মন্দির চত্বর ক্রমশ সমাজবিরোধীদের জায়গা হয়ে উঠছে বলেও অভিযোগ করলেন পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement