দুর্ঘটনা সত্ত্বেও রেষারেষি বাসের, চিন্তায় প্রশাসন

বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানিও হচ্ছে। তবুও থামছে না দূরন্ত গতিতে ছুটে যাওয়া যাত্রীবাহি বাসের রেষারেষি। বাস চালকদের এহেন আচরণে চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন থেকে বাস মালিক সংগঠনগুলি। বিপদ এড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এমনকী পরামর্শ নিচ্ছে মনোবিদদেরও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৫ ০২:০৮
Share:

বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানিও হচ্ছে। তবুও থামছে না দূরন্ত গতিতে ছুটে যাওয়া যাত্রীবাহি বাসের রেষারেষি। বাস চালকদের এহেন আচরণে চিন্তায় পড়েছে প্রশাসন থেকে বাস মালিক সংগঠনগুলি। বিপদ এড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এমনকী পরামর্শ নিচ্ছে মনোবিদদেরও।

Advertisement

দিন চারেক আগেই আসানসোলের কালিপাহাড়ি এলাকায় দু’নম্বর জাতীয় সড়কে নুনিয়া নদীর সেতু থেকে নীচে পড়ে যায় একটি মিনিবাস। চালক পালালেও সমস্ত যাত্রীদের প্রাণ বাঁচিয়ে মারা যান বাসের হেল্পার। প্রাথমিক ভাবে জানা যায়, সামনের একটি মিনিবাসের সঙ্গে রেষারেষি করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই এই দুর্ঘটনা হয়। এই ঘটনার প্রশাসনিক পর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে মহকুমা প্রশাসন। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানিয়েছেন, তাঁর নির্দেশেই পরিবহন দফতর এই তদন্ত করছে। অমিতাভবাবুর দাবি, প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে স্রেফ রেষারেষির কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কেন দুটি বাসকে রেষারেষি করতে হয়েছে সেটাই খুঁজে বের করা বেশি জরুরি। মহকুমাশাসকের আক্ষেপ, ওই দুর্ঘটনার পরেও বাস চালকদের হুঁশ ফেরেনি। অমিতাভবাবু বলেন, “গত কয়েক দিনে আমি বেশ কিছু রেষারেষির অভিযোগ পেয়েছি।” সম্প্রতি মহকুমা প্রশাসন একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, সবচেয়ে বেশি রেষারেষির ঘটনা ঘটছে নিয়ামতপুর থেকে আসানসোল পর্যন্ত জিটি রোডে। এই পথে বরাকর, চিত্তরঞ্জন ও ডিসেরগড় এই তিনটি পৃথক রুটের বাস যাতায়াত করে। স্থানীয়দের দাবি, পরপর বাস থাকায় বেশি সংখ্যক যাত্রী তোলার লক্ষ্যেই এরা রেষারেষি করে। গত ১০ ফেব্রুয়ারিও কালিপাহাড়ির কাছেই দু’নম্বর জাতীয় সড়কে রেষারেষি করার সময় উল্টে গিয়েছিল একটি দূরপাল্লার বাস। সে বার প্রাণহানি না হলেও জখম হয়েছিলেন জনা তিরিশেক যাত্রী। সে বারও কঠোর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছিলেন শহরবাসীরা।

শহরে একের পর এক বাস রেষারেষির কারণে দুর্ঘটনা ঘটায় চিন্তা বেড়েছে পুলিশেরও। দুরন্ত গতিতে ছুটে চলা দুটি বাসের রেষারেষি যে পরিবহন আইনকে লঙ্ঘন করছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশ কর্তারাও। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক দফতরের এক অফিসার জানান, পুলিশের নজরে এলেই ওই বাস চালকদের সাবধান করা হয়। কিন্তু যাত্রীবোঝাই বাসের চালকদের বিরুদ্ধে তো তত্‌ক্ষণাত্‌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, তাহলে সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়ে যাবেন। ওই পুলিশ অফিসারের আক্ষেপ, এই অভ্যাস বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়ে যায়। তবে এই অভ্যাস শুধুই আইন করে বা প্রশাসনিক চাপ তৈরি করে বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেই মন্তব্য করেছেন কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক, সেন্ট্রাল) বিশ্বজিত্‌ ঘোষ। তিনি বলেন, “চালকদের মধ্যে চেতনা আনতে হবে। এর জন্য মনোবিদদের দিয়ে কাউন্সেলিং করানোর কথা ভাবছি আমরা। বাসমালিক সংগঠনের সঙ্গেও কথা বলছি।” ইতিমধ্যে এই ব্যবস্থা চালু করতে কয়েক ধাপ এগিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মিনিবাস আ্যসোশিয়েসনের সম্পাদক সুদীপ রায়। তাঁর কথায়, “বাস চালকেরা নিয়ম লঙ্ঘন করলে শুধুমাত্র তো সাধারণ যাত্রীদের ক্ষতি হয় না, প্রাণ যায় বাসকর্মীদেরও। সম্প্রতি সেই দৃষ্টান্তও দেখা গিয়েছে। অতএব নিজেদের কথা ভেবেও এই অভ্যাস বন্ধ করা উচিত তাঁদের।” সুদীপবাবু জানিয়েছেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষেই তাঁরা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে সর্বস্তরের বাসকর্মীদের জন্য এই বিষয়ে দু’দিনের কর্মশালা করবেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement