গত বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে ‘পরিবর্তনের ঝড়ের’ মধ্যেও গলসি বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি। তার তিন বছর ঘোরার আগেই জার্সি পাল্টে এ বার তৃণমূলের হয়ে লোকসভায় প্রার্থী সুনীল মণ্ডল।
ফরওয়ার্ড ব্লকের হয়ে বিধানসভা ভোটে জয়ী সুনীলবাবু দিন কয়েক আগেই যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। বুধবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে কলকাতা থেকে ফোনে কাঁকসা হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক সুনীলবাবু বলেন, “দিদি আমায় বলেছিলেন, বড় দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিধায়ক হিসেবে একটি বিধানসভা এলাকার উন্নয়ন করা যায়। কিন্তু লোকসভায় জয়ী হলে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের উন্নয়নে সামিল হতে পারব।”
এই কেন্দ্রে সুনীলবাবুর বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের প্রার্থী সিপিএমের ঈশ্বরচন্দ্র দাস। তিনিও পেশায় শিক্ষক। ১৯৯১ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে পড়াচ্ছেন কাটোয়ার রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে। তার আগে ১৯৮১ সাল থেকে সিপিএমের দলীয় সদস্য তিনি। তাঁর স্ত্রী বনানীদেবী কাটোয়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। কয়েক বছর ধরে তাঁরা কাটোয়া শহরের সার্কাস ময়দান এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া রয়েছেন। বিরোধীরা অবশ্য সরব হয়েছে তুহিন-হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তাঁর নাম থাকা নিয়ে। প্রচারেও এই বিষয়টি তারা তুলে ধরবে বলে জানিয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্রবাবু অবশ্য এ নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতে নারাজ। তিনি বলছেন, “আমরা নির্দোষ। ওরা প্রচার করলে দেখা যাবে।” ওই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারও।
কাটোয়া লোকসভা কেন্দ্রটি ভেঙে ২০০৯ সালে তৈরি হয় বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র। তফসিলি জাতি সংরক্ষিত এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে কাটোয়া, পূর্বস্থলী উত্তর ও দক্ষিণ, মেমারি, রায়না ও জামালপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এর মধ্যে কাটোয়া কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। জেলার তিনটি লোকসভা আসনের মধ্যে একমাত্র এই কেন্দ্রেই এ বার প্রার্থী বদল করেছে বামফ্রন্ট। গত বার এখান থেকে জয়ী হয়েছিলেন সিপিএমের অনুপ সাহা। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ এ বারও অনুপবাবুকেই প্রার্থী করতে চেয়েছিল। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের তাতে সায় ছিল না। এ নিয়ে খানিকটা টানাপড়েনও শুরু হয়। শেষে অনুপবাবু প্রার্থী হবেন না বলে জানান। অমলবাবু অবশ্য বলেন, “অনুপবাবু সময় দিতে পারছিলেন না। তাই তিনি নিজেই এ বার ভোটে দাঁড়াতে ইচ্ছুক নন বলে দলকে জানিয়েছিলেন।”
ঈশ্বরচন্দ্রবাবু প্রথম ভোটে দাঁড়ান ১৯৯৩ সালে। সে বছর কাটোয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ হন। পরে ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা তিন বার জেলা পরিষদের আসনে জেতেন। এর মধ্যে ২০০৮ সালে তুহিন-জায়া নিষাদ সামন্তকে হারান তিনি। এ দিন বিকালে স্বামীর প্রার্থী হওয়ার খবর শুনে বনানীদেবী বলেন, “মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ও কাজ করে। এ বার আরও বড় জায়গায় কাজের সুযোগ করে দিল দল।” তাঁদের বড় ছেলে দেবার্ঘ্য এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা চলাকালীন প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন বাবা। তবে দেবার্ঘ্য বলে, “নিজেদের স্বার্থ না ভেবে বাবা যে এতগুলো মানুষের কথা ভাবছেন, এটা অনেক বড় ব্যাপার।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল অফিস সুবোধ ভবনে বসে ঈশ্বরচন্দ্রবাবু বলেন, “বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে নিশ্চিত ভাবে আমরা জিতব। সংসদে গিয়ে মানুষের দাবিগুলি তুলে ধরব। একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নের চেষ্টা করব।” তাল ঠুকছেন তাঁর বিপক্ষও। রাজ্যসভায় নির্বাচনের আগে দলবদল করায় সুনীলবাবুকে ‘ঘোড়া’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন গলসির বামফ্রন্ট নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, অর্থের বিনিময়ে দলবদল করেছেন তিনি। সেই অভিযোগ উড়িয়ে সুনীলবাবু পাল্টা দাবি করেছিলেন, “কয়েকটি বুড়ো ঘোড়া আলিমুদ্দিনে বসে বাকিদের চালাবে, তা হতে দেব না।” এ দিন তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পরে তিনি বলেন, “দলের সব স্তরের নেতা-কর্মী আমাকে গ্রহণ করেছেন। তাঁদের সবার ভালবাসার মর্যাদা দিতে চাই। বড় কাজের সুযোগ পাব। তা কাজে লাগাতে চাই।”