ধর্মঘটে ঠিকাকর্মীরা, জল পেল না শহর

দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুরসভার তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। তাই সোমবার কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন আসানসোল পুরসভার প্রায় বারোশো ঠিককর্মী। ফলে, প্রায় আট ঘণ্টা জল পেলেন না শহরবাসী। হল না সাফাই-সহ নানা নিয়মিত কাজকর্মও। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলার পরে আসানসোলের ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র বের করেন। তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৭
Share:

জল সরবরাহ কেন্দ্রে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভে কর্মীরা।

দৈনিক মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পুর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুরসভার তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। তাই সোমবার কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখালেন আসানসোল পুরসভার প্রায় বারোশো ঠিককর্মী। ফলে, প্রায় আট ঘণ্টা জল পেলেন না শহরবাসী। হল না সাফাই-সহ নানা নিয়মিত কাজকর্মও। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলার পরে আসানসোলের ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানসূত্র বের করেন। তার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

Advertisement

পুরসভার ওই ঠিকাকর্মীদের দাবি, তাঁরা দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে দৈনিক ১৩৫ টাকায় কাজ করছেন। অভিযোগ, পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বার বেতন বাড়ানোর দাবি করেছেন। কিন্তু মৌখিক আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। তাই বেতন বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে সোমবার সকাল থেকে তাঁরা ধর্মঘট শুরু করেন। কয়েক জন কর্মীর কথায়, “দৈনিক ২৪২ টাকা বেতন দেওয়া না হলে আমরা কাজে যোগ দেব না।” তাঁদের দাবি, তাঁরা ২০ দিন আগে পুরসভাকে চিঠি দিয়ে ধর্মঘটের কথা জানিয়েছিলেন। পুর কর্তৃপক্ষ কোনও হেলদোল না দেখানোয় তাঁরা ধর্মঘট শুরু করেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন জল সরবরাহ বিভাগের কর্মী, সাফাইকর্মী, সংস্কারকর্মী, বিদ্যুৎকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় ট্যাঙ্কে করে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কর্মীরা।

সকাল ৬টায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও জল সরবরাহ শুরু না হওয়ায় মুশকিলে পড়ে যান শহরবাসী। পরে বাসিন্দারা জানতে পারেন, পুরসভার ঠিকাশ্রমিকেরা সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করায় এই পরিস্থিতি। পুরসভার দু’টি পাম্প স্টেশন কালাঝরিয়া ও ইসমাইল থেকে জল সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেন বিক্ষোভকারীরা। ফলে, শহরের কোথাও জল পৌঁছয়নি। প্রমাদ গুনতে শুরু করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, বেশিক্ষণ এই ভাবে চললে সমস্যা হতে পারে। দমকল কর্তৃপক্ষও জানান, প্রয়োজনে জল না পেলে তাঁরাও সমস্যায় পড়বেন। একই আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করেন শহরের বেসরকারি স্বাস্থকেন্দ্রগুলিও। রমজান মাস শুরু হয়ে যাওয়ায় আরও বেশি চিন্তায় পড়েন পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement


বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পুরসভার কর্তারা।

এ দিন ইসমাইল সরবরাহ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশো বিক্ষোভকারী জমায়েত হয়েছেন। ধর্মঘট তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সেখানে যান ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন মেয়র পারিষদ। কিন্তু ধর্মঘট তোলা তো দূরের কথা, উল্টে তাঁদের ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা। বিক্ষোভের জেরে এলাকা ছাড়েন ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদেরা। পরে অবশ্য দুপুর ২টো নাগাদ বিক্ষোভকারীরা ফের ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করেন। ঠিক হয়, অগস্টের বেতন থেকে তাঁরা দৈনিক ১৭৫ টাকা করে মজুরি পাবেন। এর পরেই বিক্ষোভ থামে। জল সরবরাহ শুরু হয়।

জল সরবরাহের মতো জরুরি পরিষেবা বন্ধ রেখে ধর্মঘট হল কেন, সে প্রশ্নে বিক্ষোভকারীদের দাবি, চিঠি পাঠিয়ে জানানো সত্ত্বেও পুর কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সাড়াশব্দ না মেলায় ধর্মঘটের রাস্তায় যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমাদের তিন দিন আগে চিঠি দিয়ে ধর্মঘটের কথা জানানো হয়েছে।” পুরসভার বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যদি তিন দিন আগেও চিঠি পেয়ে থাকে পুরসভা, তবে তার পরেও আলোচনায় বসা হল না কেন। সেক্ষেত্রে তো অন্তত এ দিনের দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতেন শহরবাসী। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমর তাপস রায়ের দাবি, “আর দিন দশ পরেই এই বোর্ডের মেয়াদ শেষ হবে। তাই বিক্ষোভকারীদের দাবিকে গুরুত্ব দেননি পুর কর্তৃপক্ষ। মাঝখান থেকে শহরের বাসিন্দারা ৮ ঘণ্টা নির্জলা থাকলেন।” ডেপুটি মেয়র এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

সোমবার আসানসোলে শৈলেন সরকারের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন