গুসকরা

পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নালিশ, প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও

দল নিযুক্ত পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুরসভার বিভিন্ন কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন গুসকরার তিন কাউন্সিলর। তাঁদের দাবি, পুরপ্রধান ইচ্ছেমতো পুরসভা চালাচ্ছেন। দলের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫২
Share:

দল নিযুক্ত পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুরসভার বিভিন্ন কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন গুসকরার তিন কাউন্সিলর। তাঁদের দাবি, পুরপ্রধান ইচ্ছেমতো পুরসভা চালাচ্ছেন। দলের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যদিও অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়।

Advertisement

এর আগেই স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছিল ওই তিনজনের এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। দলীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে রিপোর্টও তৈরি করে পুরসভা। তার পরে পরেই কমিটি থেকে পদত্যাগের এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ হয়ে গেল বলে দলেরই একাংশের মত।

ওই তিন তৃণমূল কাউন্সিলর, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সনাতন বেসরা ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদনিহারা মুন্সির দাবি, তাঁরা প্রত্যেকেই পুরসভার নানা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি। মৃত্যুঞ্জয়বাবু জল সরবরাহ, সনাতনবাবু জঞ্জাল সাফাই ও চাঁদনিহারা মুন্সি অর্থ ও রিসার্চ মোবিলাইজেশন স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনজনেই লিখিত ভাবে অভিযোগে জানিয়েছেন, পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় পুরসভা চালাচ্ছেন নিজের ইচ্ছামতো। দলীয় নির্দেশ থাকা সত্বেও কাউন্সিলরদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই তাঁদের বিভাগগুলির বিষয়ে একক ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। চেয়ারম্যানের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে বলেও তাঁদের দাবি। ওই তিন কাউন্সিলর আরও জানান, পুরসভার ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কেনা গাড়ি ও পুরসভার তেল নিয়ে পুরপ্রধান সপরিবারে পুর এলাকার বাইরে বিভিন্ন ধর্মস্থান ও আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পুরসভাকে কার্যত পৈত্রিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন তিনি। এছাড়া বোর্ড মিটিংয়ের দিন বহিরাগত, সশস্ত্র গুণ্ডাদের নিয়ে এসে কাউন্সিলরদের ভয় দেখানো হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ।

Advertisement

মোবাইল বন্ধ থাকায় সনাতনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে কাউন্সিলর চাঁদনিহারা মুন্সির দাবি, “আমি পদ্যতাগ করতে চাই কারণ আমাকে না জানিয়েই অর্থ দফতরের নানা টাকা বেরিয় যাচ্ছে। আমি বারবার বলেছি, কাউকে কোনও টাকা দিলে তা যেন আমাকে জানানো হয়। কারণ সেই টাকা বরাদ্দ যদি বেআইনি ভাবে হয়ে থাকে তাহলে তো আমার মাইনে থেকেই তা শোধ করতে হবে। কিন্তু বরাদ্দের ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানানো হচ্ছে না।”

মৃত্যুঞ্জয়বাবুর বিরুদ্ধে আগেই সরকারি প্রকল্পের টাকায় বরাদ্দ হওয়া বাড়ি নিজের ঠাকুমার নামে করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে রিপোর্টও পেশ করতে চলেছে পুরসভা। কমিটি থেকে পদত্যাগ তার সঙ্গেই সম্পর্কিত কি না সে প্রশ্ন করা হলে মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “আসলে পুরপ্রধানের আচার আচরণে বিতশ্রদ্ধ হয়েই আমি পদত্যাগ করতে চেয়েছি। অন্য দুই কাউন্সিলর আমার সঙ্গেই রয়েছেন।”

পুরপ্রধান ছাড়াও দলের নেতাদের কাছেও অভিযোগগুলি পাঠিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগের প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও মহকুমাশাসকের (উত্তর) কাছেও। মহকুমাশাসক স্বপন কুণ্ডু অবশ্য বলেন, “আমি ওই ধরণের কোনও পদত্যাগপত্র এখনও হাতে পাইনি। পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” পদত্যাগপত্রে যদিও শুক্রবার অর্থাৎ ১০ অক্টোবরের তারিখ দেওয়া রয়েছে।

তবে অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বুর্ধেন্দুবাবু। তাঁর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করছেন শহরের এক প্রবীণ কাউন্সিলর। ওই কাউন্সিলর নিজেই নানা সরকারি দফতরে ফোন করে নিজেকে চেয়ারম্যান বলে দাবি করে নানা নির্দেশ দিচ্ছেন। আমি তাই ঠিক করেছি, আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগের প্রমাণ দিতে বলব ওই তিনজনকে। যদি তাঁরা তা দিতে না পারেন, তাহলে আমি মানহানির মামলা করব।” তাঁর আরও দাবি, সনাতন বেসরা ইতিমধ্যে তাঁকে জানিয়েছেন, ওই পদত্যাগপত্রে তিনি সই করেননি। তবু তাঁর নামে মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে। ওই তিনজন ঘটনাটিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন বলেও তাঁর দাবি। দলের নেতাদের ওঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। দলের এক নেতা তথা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইও প্রশ্ন তুলেছেন, “ওই ডি ক্যাটাগরির পুরসভায় ওঁদের আবার কোনও পদ রয়েছে না কি? পদই নেই তো ওরা কী করে পদত্যাগ করলেন?”

দলের অন্যতম জেলা পর্যবেক্ষক অলোক দাস বলেন, “আমাদের কাছে এখনও কোনও পক্ষ থেকেই অভিযোগ আসেনি। যদি আসে তা খতিয়ে দেখা হবে। এভাবে পুরসভা চলতে পারেনা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন