পুরসভা সংযুক্তিকরণের জন্য ভোট প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা নিয়ে আগেই ক্ষোভ জানিয়েছিল বিরোধী দলগুলি। এ বার হাইকোর্টও সে নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আসানসোলে ফের সরব হল বিরোধীরা। অবিলম্বে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা না করা হলে ফের রাস্তায় নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
কয়েকটি পুরসভাকে পুর নিগমের সঙ্গে যুক্ত করার কাজ চলছে, এই যুক্তিতে রাজ্যের সাতটি পুরসভায় ভোট নেওয়া হচ্ছে না। সেগুলির মধ্যে রয়েছে এই শিল্পাঞ্চলের চার পুরসভা আসানসোল, কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া। এর মধ্যে আসানসোল ও কুলটির পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে গত বছরের জুনে। সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিতে ভোট ঝুলিয়ে রেখে সংযুক্তিকরণের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে কেন, সে ব্যাপারে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের ব্যাখ্যা চেয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ। তিন সপ্তাহের মধ্যে দু’পক্ষকে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কুলটি, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জকে আসানসোল পুরসভার সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে জন্য ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের কাজ চলছে। সে কারণে পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোলেও প্রশাসক বসিয়ে আসানসোল ও কুলটিতে কাজ চালানো হচ্ছে। এই দুই পুরসভায় প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত। নাগরিকদের দৈনন্দিন পরিষেবা সংক্রান্ত কাজের সুবিধার জন্য প্রশাসক বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ও দিকে আবার আগামি ২৭ মে জামুরিয়া ও রানিগঞ্জ পুরসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, সেখানেও সম্ভবত প্রশাসক নিয়োগ করে কাজ চালানোর পাশাপাশি চারটি পুরসভার মোট ১৩০টি ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাসের কাজ করা হবে। তা শেষ হলেই ভোট করানো হবে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসানসোলে এসে জানিয়েছিলেন, আসানসোল পুরসভা ছোট হওয়ার জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ ঠিক মতো করা যাচ্ছে না। চারটি পুরসভা একত্র করে বড় পুরসভা তেরি করে অনেক বেশি এলাকার উন্নয়ন করা যাবে।
চারটি পুরসভা সংযুক্তকরণের যুক্তি নিয়ে অবশ্য গোড়া থেকে প্রশ্ন তুলেছে নানা মহল। রানিগঞ্জ সিটিজেন্স ফোরামের তরফে এ ব্যাপারে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। জামুড়িয়া, কুলটি থেকেও নানা সংগঠন বিরোধিতা করেছে। সময় মতো ভোট না কারোনোয় সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “চার পুরসভাকে একত্র করা একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ভোট না করানো স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয়। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে আমরা খুশি।”
বিজেপি আবার দাবি করেছে, সময়ে ভোট না করানোর পিছনে শাসকদলের ভয় কাজ করছে। দলের আসানসোল জেলা সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী দাবি করেন, “গত লোকসভা ভোটের নিরিখে আমরা এখানে ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেই এগিয়ে। তাই ওরা ভয় পেয়ে ভোট করাচ্ছে না।” তিনি জানান, লোকসভা ভোটের ফলের হিসেব অনুযায়ী, আসানসোল পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪৫টিতে ও কুলটির ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩টিতেই এগিয়ে। প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক আকাশ মুখোপাধ্যায়ও দাবি করেন, “তৃণমূল আসলে গদি হারানোর ভয়ে ভোট করাচ্ছে না।”
বিরোধীদের বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরি সভাপতি ভি শিবদাসন। তাঁর দাবি, রাজ্য জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে ভাবে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে দিশেহারা বিরোধীরা। তাঁর কথায়, “চারটি পুরসভাকে একত্র করে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নের ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। বিরোধী দলগুলি তাতে বাধা দিতে চাইছে।”