পেল্লায় মিষ্টি, যাত্রায় মেতেছে দোগাছিয়া

এক একটি মিষ্টি প্রায় এক হাত লম্বা। দু’হাত দিয়ে অনেক কষ্টে সেটাকে তোলার পরে ফেলা হল একটি বালতিতে। কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বালতি হাতে বাড়ি চললেন ক্রেতা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া দোলমন্দিরের পাশে গেলে চোখে পড়বে এই অবাক দৃশ্য। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে সেখানে বসেছে মিষ্টির মেলা। দোকানে ঢুঁ মারলেই মিলছে পেল্লায় সাইজের সব মিষ্টি।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০০:৫০
Share:

বাঁ দিকে, দোলমন্দিরে বিগ্রহ। ডান দিকে, তৈরি হচ্ছে বড় মিষ্টি। নিজস্ব চিত্র।

এক একটি মিষ্টি প্রায় এক হাত লম্বা। দু’হাত দিয়ে অনেক কষ্টে সেটাকে তোলার পরে ফেলা হল একটি বালতিতে। কড়কড়ে পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে বালতি হাতে বাড়ি চললেন ক্রেতা। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া দোলমন্দিরের পাশে গেলে চোখে পড়বে এই অবাক দৃশ্য। বসন্ত উৎসব উপলক্ষে সেখানে বসেছে মিষ্টির মেলা। দোকানে ঢুঁ মারলেই মিলছে পেল্লায় সাইজের সব মিষ্টি।

Advertisement

পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া গ্রামের প্রধান উৎসব হল রায়চৌধুরি পরিবারের দোল উৎসব। মূলত পারিবারিক উৎসব হলেও ক্রমেই এই উৎসব গ্রামের উৎসবে পরিণত হয়েছে। গ্রামের দোলমন্দিরে সেই উৎসব উপলক্ষেই বসেছে মেলা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উৎসবে সামিল হতে মাদরা, দাস্তিপাড়া, সোনারুদ্র, লক্ষ্নণপাড়া, ভাতুড়িয়া, কচুয়া, মিনাপুর, যশপুর গোকর্ণ-সহ বহু গ্রামের বাসিন্দারা আসছেন। রঙের উৎসবে সামিল হওয়ার পরে তাঁদের অনেকেই মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু এত বড় মিষ্টি খাবেন কী করে? প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় বাসিন্দা সুশীল মণ্ডল, সঞ্জীব ঘোষেরা বলেন, “বড় মিষ্টি কিনে বাড়ি নিয়ে গিয়ে কেটে ভাগ করে খাওয়া হয়। এক থালায় বড় মিষ্টি কেটে খাওয়ার মজাই অন্যরকম।”

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে দোগাছিয়ার দোল উৎসব। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় হাজার পাঁচেক গ্রামবাসী। ফলেয়ারি স্কুল থেকে রায়চৌধুরি পরিবারের দোলতলা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারের শোভাযাত্রায় ছিল রণ পা, আদিবাসী নৃত্য, ঢাক, ঢোল। ছিল কন্যাশ্রী প্রকল্প, বাল্যবিবাহ বন্ধ প্রভৃতি সামাজিক বিষয়ে প্রচার। শোভাযাত্রায় হাঁটেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ও পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। রায়চৌধুরি পরিবারের সদস্যরা জানান, বহু বছর আগে পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মেড়তলা এলাকা থেকে তাঁদের পরিবারের সদস্যরা দোগাছিয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। তার কয়েক বছর পরেই শুরু হয় দোল উৎসব। রায়চৌধুরি পরিবারের দাবি, এ বার সেটা ৫২৬ বছরে পড়ল।

Advertisement

রায়চৌধুরি পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মদনমোহন, গোপীনাথ, রাধাকৃষ্ণ, কেষ্টচন্দ্র ও দশমা নামে পাঁচটি বিগ্রহ তাঁদের পারিবারিক মন্দিরে গৃহদেবতা হিসেবে পূজিত হন। আগে পাঁচটি মূর্তিই ছিল কষ্টিপাথরের। চল্লিশ বছর আগে দশমা মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। পরে পরিবারের উদ্যোগে দশমা দেবীর ধাতব মূর্তি তৈরি করা হয়। পারিবারিক রেওয়াজ অনুযায়ী, দোল উৎসব চলে চার দিন। এই চার দিন ভোরে দশমা বিগ্রহ বাদে বাকি বিগ্রহগুলিকে এক এক দিন করে দোলমন্দিরে নিয়ে আসা হয়। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ী, রবিবার ভোরে প্রথমে কেষ্টচন্দ্র বিগ্রহকে চর্তুদোলায় চাপিয়ে দোল মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। রাত পর্যন্ত সেখানে পুজো চলে। চলে আবির খেলা। সন্ধ্যায় হয় আতসবাজির প্রদর্শনী। পুজো শেষ হওয়ার পরে বিগ্রহকে রাতে আবার পারিবারিক মন্দিরে রেখে আসা হয়।

পারিবারিক পুজোর রীতি বাদ দিলেও দোগাছিয়ার দোল উৎসব বিখ্যাত মিষ্টির জন্য। প্রতি বছরের মত এ বছরও দোল মন্দির চত্বরে বসেছে মিষ্টির মেলা। সেখানে দেদার বিক্রি হচ্ছে পেল্লায় সাইজের মিষ্টি। এক-একটি মিষ্টির দাম দু’শো থেকে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত। মিষ্টি বিক্রেতারা জানান, মেলার প্রতি দিন গড়ে ৮০০ কেজি ছানার মিষ্টি তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ৫০০ টাকার দামের এক-একটি মিষ্টি তৈরি করতে দেড় কেজির বেশি ছানা লাগে। বড় মিষ্টির সঙ্গেই সাধারণ সাইজের রসের মিষ্টিও ভাল বিক্রি হচ্ছে। রঙ, মিষ্টির সঙ্গেই রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দোল মন্দির লাগোয়া মাঠে বাঁধা হয়েছে বড় মঞ্চ। আজ, মঙ্গলবার ও বুধবার সেখানে যাত্রা হওয়ার কথা।

সব মিলিয়ে দোল উৎসবে জমজমাট দোগাছিয়া। রায়চৌধুরি পরিবারের সদস্য ও দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান প্রণবকান্তি রায়চৌধুরির কথায়, “দোল উৎসবে গোটা গ্রামের চেহারাটাই বদলে যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন