আধো অন্ধকারে জঙ্গল ঘেরা নির্জন পথ ধরে যাচ্ছিলেন এক যুবক। হঠাৎই তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়াল আততায়ী। হাতে চকচকে ভোজালি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পথচারীর জামার কলার চেপে ধরে দেহে কোপ বসাতে শুরু করল সে। শেষে রক্তাক্ত যুবককে রাস্তায় ফেলে চম্পট দিল।
একটি খুনের মামলায় এজলাসে পর্দা টাঙিয়ে পুলিশের তৈরি করা ঘটনার পুনর্নির্মাণের এই ভিডিও দেখলেন আসানসোল আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (১) মুকুলকুমার কুণ্ডু। ছিলেন আইনজীবীরা-সহ অনেকেই। বিভিন্ন মামলায় ঘটনার পুনর্নির্মাণের পরে তার সিডি বিচারকের কাছে জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু এই আদালতে এজলাসে বসে সেই ভিডিও দেখার ঘটনা প্রথম বার হল বলে আইনজীবীরা জানান। আসানসোলের সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দেশের কিছু বড় শহরের আদালতে এমনটা আগে হয়েছে। তবে আসানসোলে তা এই প্রথম বার হল।’’
এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী তাপস উকিল জানান, ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় রানিগঞ্জের নিমচা লাগোয়া রেললাইনের কাছে রাস্তায় খুন হন অমৃতনগর কোলিয়ারি আবাসন এলাকার বাসিন্দা ওমপ্রকাশ রায় (২৪)। পরে সেই রাস্তা ধরে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন ওমপ্রকাশের প্রতিবেশী সুরজ বাউড়ি। তিনিই লোকজন ডেকে আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশের দাবি, হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাস্তায় ওমপ্রকাশ ওই প্রতিবেশীদের জানান, তাঁকে সাহাদত আনসারি নামে এক ব্যক্তি কুপিয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই ওমপ্রকাশের মৃত্যু হয়।
ওমপ্রকাশের পরিবার অভিযোগ করার পরেই পুলিশ সাহাদতকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ধৃত নিজের অপরাধের কথা স্বীকারও করে। এর পরেই গত বছর ৮ অক্টোবর রানিগঞ্জ থানার পুলিশ ধৃতকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আরও আট জনের সাক্ষ্যগ্রহণ বাকি। ইতিমধ্যে বিচারক ঘটনার পুনর্নির্মাণের রেকর্ডিং দেখানোর নির্দেশ দেন। সোমবার তাঁর এজলাসেই বড় পর্দা টাঙিয়ে তা দেখানো হয়। এজলাসে এই ভিডিও দেখানোর কথা শুনে আদালতে আসা অনেকেই ভিড় জমান।