বালি খাদান বন্ধে ব্যবস্থা নেই, বাড়ছে ক্ষোভ

ভাগীরথীর পাড় পরিদর্শনে গিয়ে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে দেদার মাটি চুরির ঘটনা নিজে দেখেছিলেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার। কাটোয়া মহকুমা জুড়ে অবৈধ বালি খাদানের বিষয়টি অজানা নয় প্রশাসনের কর্তাদের। বেআইনি খাদান থেকে বালি নিয়ে বেপরোয়া ভাবে যাওয়া গাড়ির ধাক্কায় এই মহকুমায় গত মে-জুনে ৪ শিশু-সহ বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। বেআইনি বালি খাদান বন্ধে অভিযানের আশ্বাস দিয়েছিল মহকুমা প্রশাসন। কিন্তু চার মাস পরেও সেই অভিযান হয়নি। ফলে, মহকুমা জুড়ে তেমনই রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বালি খাদান।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

অজয়ের চর থেকে বালি তোলা হচ্ছে দেদার। মঙ্গলকোটের কোগ্রামে অসিত বন্দোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

ভাগীরথীর পাড় পরিদর্শনে গিয়ে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপে দেদার মাটি চুরির ঘটনা নিজে দেখেছিলেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার। কাটোয়া মহকুমা জুড়ে অবৈধ বালি খাদানের বিষয়টি অজানা নয় প্রশাসনের কর্তাদের। বেআইনি খাদান থেকে বালি নিয়ে বেপরোয়া ভাবে যাওয়া গাড়ির ধাক্কায় এই মহকুমায় গত মে-জুনে ৪ শিশু-সহ বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। বেআইনি বালি খাদান বন্ধে অভিযানের আশ্বাস দিয়েছিল মহকুমা প্রশাসন। কিন্তু চার মাস পরেও সেই অভিযান হয়নি। ফলে, মহকুমা জুড়ে তেমনই রমরমিয়ে চলছে অবৈধ বালি খাদান। সেচ দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, “আমরা সবে বালি খাদানগুলির দায়িত্ব নিয়েছি। এখনও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। বেআইনি খাদান বন্ধ করতে আর কিছু দিন সময় লাগবে।”

Advertisement

শুধু বালি তোলা নয়, প্রতি দিন একই পথে কয়েকশো বালির গাড়ি যাতায়াত করে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর ফলে গ্রামের ভিতরের রাস্তা এবং অজয়ের পাড়ের রাস্তাগুলি বেহাল হয়ে পড়ছে। রাস্তায় প্রতি দিন যানজট হচ্ছে। আবার বেপরোয়া বালির গাড়ির ধাক্কায় কয়েকটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ, ওই সব বালি খাদান বন্ধ ও বেপরোয়া বালির গাড়ি ধরার ব্যাপারে মহকুমা প্রশাসন ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকার জন্যই অবৈধ খাদান ব্যবসায়ীরা রীতিমতো বাঁধ কেটে নদী পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে গিয়ে বালি তুলছেন। বৃহস্পতিবারই কেতুগ্রামের রসুই গ্রামের বাসিন্দারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মঙ্গলকোটের ধান্যরুখী মৌজার ১৫৮১ প্লট থেকে অজয় নদের বালি তোলা হচ্ছে। এই খাদানটি সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মঙ্গলকোটের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক দিন ধরে ধান্যরুখী মৌজায় বেআইনি খাদান থেকে বালি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। মঙ্গলকোট ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের যে ‘সিল’ দেওয়া চালান দেওয়া হচ্ছে তা আদতে ভুয়ো। সেচ দফতরের অনুমতি ছাড়া রীতিমতো বাঁধ কেটে রসুই গ্রামের ভিতর দিয়ে বালির গাড়ি যাতায়াত করছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, গ্রামের ভিতর দিয়ে সব সময় বালির গাড়ি যাতায়াত করলে যেমন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই বেআইনি খাদানের জন্য সেচ দফতরের বাঁধের ক্ষতি হতে পারে। ময়ূরাক্ষী ক্যানাল ডিভিশনের মুর্শিদাবাদের সালার সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে ওই বাঁধ পরিদর্শনের পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত দফতরের কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন বলে সেচ দফতরের কর্তারা জানান।

Advertisement

কাটোয়া মহকুমার অন্যতম পুরনো রাস্তা রসুই ঘাট-কাটোয়া। বালির গাড়ির দাপটে রসুই ঘাট থেকে রাজুয়া বাসস্টপ পর্যন্ত রাস্তা দফারফা। এই রাস্তায় পিচের উপরে পুরু হয়ে বালির আস্তরণ পড়েছে। রাস্তার একাংশ জুড়ে খানাখন্দ। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায়ই ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেন। মঙ্গলকোটেরও বিভিন্ন গ্রামে রাস্তার একই অবস্থা। ঢালাই রাস্তাও ভেঙে পড়ছে।

শুধু রাস্তা নয়, বেআইনি খাদান থেকে বালি নিয়ে যাতায়াত করার ফলে মঙ্গলকোটের অজয়ের বাঁধেরও বেশ ক্ষতি হচ্ছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। অজয়ের পাড়ে বাঁধানো বোল্ডার খুলে গিয়েছে। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা বেআইনি বালির ঘাট বন্ধের দাবিতে ও রাস্তা সংস্কারের জন্য গণস্বাক্ষর করে প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও সাড়াই মেলেনি বলে ক্ষোভ গ্রামবাসীদের।

কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার মেনে নেন, বালির গাড়ি ধরতে বা বেআইনি খাদান বন্ধে এখনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি তাঁরা। তবে তাঁর আবার আশ্বাস, এ বার মহকুমা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, না আঁচালে আর বিশ্বাস করছেন না তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন