বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট বাড়াতে চায় তৃণমূল

বছর খানেক পরেই কাটোয়া পুরভোট। পুরসভা দখলের জন্য এখন থেকেই দলের কর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মানুষের সঙ্গে ‘সংযোগ’ বাড়ানোর কাজ করতে হবে বলে জানালেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে সদ্য জয়ী তৃণমূলের প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। রবিবার দুপুরে সদ্য জয়ী প্রার্থীকে নিয়ে কাটোয়া শহরের রবীন্দ্রভবনে একটি কর্মী বৈঠক করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। বৈঠকে প্রত্যেক বক্তাই পুরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০০:১০
Share:

তৃণমূলের ‘পাখির চোখ’ এ বার কাটোয়া পুরসভা।

Advertisement

বছর খানেক পরেই কাটোয়া পুরভোট। পুরসভা দখলের জন্য এখন থেকেই দলের কর্মীদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে মানুষের সঙ্গে ‘সংযোগ’ বাড়ানোর কাজ করতে হবে বলে জানালেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে সদ্য জয়ী তৃণমূলের প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। রবিবার দুপুরে সদ্য জয়ী প্রার্থীকে নিয়ে কাটোয়া শহরের রবীন্দ্রভবনে একটি কর্মী বৈঠক করে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। বৈঠকে প্রত্যেক বক্তাই পুরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেন।

১৯৯৫ সাল থেকে কাটোয়া পুরসভায় ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে তৃণমূল বাংলা জুড়ে সবুজের ঝড় তুললেও কাটোয়াতে সেই অর্থে এতদিন দাঁত ফোটাতে পারেনি। কংগ্রেসের গড়ে চিড় ধরাতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের উপ-পুরপ্রধান অমর রামকে দলে টেনে নিয়ে এসে তাঁকে কাটোয়া শহরের সভাপতি করে দেয় তৃণমূল। তবে লোকসভা ভোটের বুথভিত্তিক হিসেব করলে দেখা যায়, গত পুরসভার চেয়ে কিছুটা ভোট বাড়লেও কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলার মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি তৃণমূল। বরং অমর রামের ওয়ার্ড, ১৪ নম্বরে অল্প ভোটে হলেও কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই তৃণমূল তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তবে এই তথ্যকে গুরুত্ব দিতে রাজি নন অমরবাবু। সভার শুরুতেই কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার বিরুদ্ধে সুর বেঁধে দিয়ে তিনি বলেন, “কাটোয়া শহরের ১৯টি ওয়ার্ডের ফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে একটি মাত্র ওয়ার্ড ছাড়া সবেতেই কংগ্রেস বিরোধী ভোট বেশি। কংগ্রেস বিরোধী ভোটকে আমাদের দিকে টেনে আনতে হবে।”

Advertisement

সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটে কাটোয়া পুর এলাকায় চতুর্মুখী লড়াইয়ে কংগ্রেস আটটি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ২,৩,৭,১০,১১,১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলার অন্যতম সহ-সভাপতি কাঞ্চন মুখোপাধ্যায় এ দিনের সভায় বলেন, “কর্মীদের উচিত, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে, তা খুঁজে বের করা। তারপর তাঁদের কাছে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার কারণ জেনে তা বিশ্লেষণ করা।” জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মণ্ডল আজিজুল বলেন, “আমাদের কোনও অভিভাবক ছিল না। এ বার সুনীলবাবুকে অভিভাবক হিসাবে পেয়েছি। তাঁর নির্দেশ মতোই আমরা কাটোয়া পুরসভা দখল করতে ঝাঁপাব।” এই ভোটে কাটোয়া শহরে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে ১৬,৩৯৯। বিজেপি পেয়েছে ১৩,৮৯৯। সেখানে তৃণমূল পেয়েছে ৯৯৩১ ও সিপিএম পেয়েছে ৮৪৯৩। তবে তৃণমূলের দাবি, বিজেপির ভোট কিছুটা কাটতে পারলেই শহরের ১৪, ৩, ১৮, ১১, ১২ এ সমস্ত ওয়ার্ড পুরভোটে তাদের দখলে চলে আসবে।

বাম আমলেও লালদূর্গ বর্ধমানে কাটোয়া ও দাঁইহাট পুরসভা সিপিএমের গলার কাঁটা ছিল। এ দিন সে প্রসঙ্গ তুলে সদ্য বিজয়ী সুনীলবাবু বলেন, “কাটোয়া ও দাঁইহাট পুরসভা নির্বাচনেও আমাদের জয়ী হতে হবে। কংগ্রেস বিরোধী ভোটকে হৃদয় দিয়ে জয় করতে হবে। আমি সাংসদ হিসাবে এলাকা উন্নয়নের জন্য যে টাকা পাব তার একটা বড় অংশ শুধুমাত্র কাটোয়া শহরের জন্য খরচ করব। এ ব্যাপারে কাটোয়া পুরসভার সহযোগিতা না পেলেও উন্নয়ন কী ভাবে করতে হয় তা আমার জানা আছে।” লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্ মুহূর্তেও কাটোয়ার এক সভায় তৃণমূলের এক নেতা বলেছিলেন, “বীরভূম-নদিয়া-বর্ধমানের নেতারা একসঙ্গে বসে কাটোয়া পুরসভা দখলের ছক কষবেন।”

তবে কংগ্রেসের দাবি, পুরভোট ও বিধানসভা ভোটে বিজেপিতে চলে যাওয়া ভোট নিশ্চিত ভাবে ফিরে আসবে। তৃণমূলের জেলাস্তরের এক নেতা বলেন, “১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস কাটোয়া শহরে তৃতীয় স্থানে ছিল। ২০০৪ সালে কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী সৈফুদ্দিন চৌধুরী কাটোয়া শহরের একটি মাত্র বুথ থেকে জিতেছিলেন। অথচ পুরসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে কাটোয়ার মানুষ কংগ্রেসকে দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছেন। সব নির্বাচন এক করে দেখা ঠিক নয়।” পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, ভোটের দিন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দাপাদাপির জন্য ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের মনোভাব সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়নি। প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা কাটোয়ার প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরের উন্নয়নের জন্য আমরা অবিরাম চেষ্টা করে চলেছি। কী করেছি তার বিচার মানুষ করবেন। আমরা মানুষকে বিশ্বাস করি, তাঁদের উপর ভরসা করি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন