ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামে রাখা জলের পাইপ, যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র।
আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। পুরসভা খুঁজে পেয়েছিল ঝকঝকে ভগৎ সিংহ স্টেডিয়াম।
নির্মীয়মাণ জলপ্রকল্পের শত-শত পাইপ কোথায় রাখা হবে? ফের ভরসা সেই ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামের উপরেই।
খেলাধুলোর জায়গা বারবার এমন অপব্যবহারে ক্ষুব্ধ দুর্গাপুর শহরের বাসিন্দারা। সিপিএম পরিচালিত পুরসভা স্টেডিয়ামটি গড়েছিল। এখন পুরসভা তৃণমূলের দখলে। বিষয়টি নিয়ে তাই সরব হয়েছে সিপিএম-ও।
সম্প্রতি ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামের চত্বরে গাদা করে রাখা হয়েছে শত-শত জলের পাইপ। রয়েছে মাটি খোঁড়ার যন্ত্র-সহ নানা যন্ত্রপাতি। মূল মাঠটি লম্বায় ১০৫ ফুট, চওড়ায় ৭৫ ফুট। ফুটবল, ক্রিকেটদু’ধরনের খেলার জন্যই তৈরি হয়েছে এই মাঠ। মোহনবাগানের ফুটবল দল দুর্গাপুরে আবাসিক শিবির করতে এলে সাধারণত এই স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে থাকে। খেলার মাঠ তার দিয়ে ঘেরা। সেখান থেকে সীমানা পাঁচিল পর্যন্ত বিস্তৃত জায়গা পড়ে আছে। যা ভবিষ্যতে অ্যাথলেটিক ট্র্যাক, দর্শকদের বসার জায়গা বা অন্য কোনও প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ভেবে রাখা হয়েছে। সেই জায়গা এখন দখল করেছে জলের পাইপ। স্টেডিয়ামের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী বলেন, “কয়েক দিন আগে হঠাৎ দেখি, স্টেডিয়ামের গেট খুলে বড় বড় ট্রাক ঢুকছে। এর পরে মোটা মোটা পাইপ নামাতে শুরু করল ট্রাক নিয়ে আসা লোকজন। পরে আবার কয়েকটি মাটি খোঁড়ার যন্ত্রও ঢুকে গেল স্টেডিয়ামে।” এ সব দেখে শহরের অনেক ক্রীড়াপ্রেমীরই দাবি, স্টেডিয়াম কখনও এ ভাবে ব্যবহার করা উচিত নয়।
এই স্টেডিয়াম অপব্যবহারের অভিযোগ আগেও উঠেছে। গত বছর জুলাইয়ের এক সকালে হঠাৎ পুরসভার আবর্জনা বোঝাই গাড়িগুলি গিয়ে বর্জ্য ঢালতে শুরু করে স্টেডিয়ামের সম্প্রসারিত অংশে। পুরসভার দাবি ছিল, শহরের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। ফলে, বর্জ্য ফেলার কোনও নির্দিষ্ট জায়গা মিলছে না। তাই এক-এক সময় এক-এক জায়গায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তা বলে স্টেডিয়াম? পুরসভা জানায়, স্টেডিয়ামের নিচু অংশে বর্জ্য ফেলায় তা ভরাট হয়ে যাবে। শহরবাসীর অনেকেই পুরসভার এমন কাজের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তা অগ্রাহ্য করে বেশ কিছুদিন টানা সেখানে বর্জ্য ঢালা হয়। এ বার আবার জলের পাইপ, যন্ত্রপাতি, গাড়ি রাখার জায়গা হিসেবে স্টেডিয়াম ব্যবহার করায় ফের ক্ষুব্ধ শহরবাসীর একাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক ক্রীড়া কর্তার মতে, স্টেডিয়াম একান্ত ভাবেই খেলাধুলোর জন্য ব্যবহার হওয়া উচিত। মাঝে-মাঝে অনেক স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে তার ফলে মাঠের সবুজ অংশের ক্ষতি হয়। কাজেই তা যত না হয়, মাঠের পক্ষে তত ভাল। তিনি বলেন, “ভগৎ সিংহ স্টেডিয়ামের প্রশংসা করেছেন মোহনবাগানের বহু খেলোয়াড় ও বিদেশি কোচেরা। ব্যারেটোও এ কথা বলেছেন। সেই স্টেডিয়ামের এমন অপব্যবহার ঠিক নয়।” তাঁর দাবি, জলপ্রকল্পের পাইপ রাখার জায়গার অভাব নেই শহরে। বহু ফাঁকা মাঠ পড়ে রয়েছে যেখানে খেলাধুলো হয় না। মহকুমা লিগে নিয়মিত খেলেন এমন এক ফুটবলার বলেন, “আমাদের লিগের খেলা ওই স্টেডিয়ামে হয় না। তবে আমাদের সবারই স্বপ্ন ওখানে খেলা। খেলোয়াড় হিসেবে স্টেডিয়ামের অপব্যবহার দেখলে কষ্ট হয়।” প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা শহরের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর বক্তব্য, “স্টেডিয়ামটির পরিকাঠামো বেশ আধুনিক। বৃষ্টি হলে দ্রুত জল নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শহরের গর্ব এই স্টেডিয়াম। এমন কিছু করা উচিত নয় যাতে তা প্রশ্নের মুখে পড়ে।”
পুরসভার বর্তমান মেয়র পারিষদ (জল সরবরাহ) প্রমোদ সরকার অবশ্য দাবি করেন, স্টেডিয়ামের যাতে কোনও রকম ক্ষতি না হয় সে কথা মাথায় রেখেই পাইপ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টেডিয়াম চত্বরের বেশ কিছুটা এবড়ো-খেবড়ো অব্যবহৃত জায়গা সমান করে সেখানে পাইপ রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, “স্টেডিয়ামের কোনও ক্ষতি হবে না। কোটি-কোটি টাকার পাইপ রয়েছে। ফাঁকা জায়গায় রাখলে তা কেউ নষ্ট করে দিতে পারে। চুরি যাওয়ার ভয়ও আছে। স্টেডিয়ামে রাখায় সেগুলি নিরাপদ থাকবে। আগামী মার্চের মধ্যে ধাপে-ধাপে সরিয়ে ফেলা হবে।”