ভারোত্তোলনে পদক পেলেন সব্জি ব্যবসায়ী

প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগেও জানতেন না, এশীয় স্তরে ‘স্ট্রেংথ লিফটিং’ প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন কি না। শেষ পর্যন্ত বর্ধমান পুলিশ, কাটোয়ার বিধায়ক ও ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতায় ওই সব্জি ব্যবসায়ী উড়ে যান সৌদি আরবের বাহারিন। সেখান থেকে ১০৫ কেজি ভারোত্তালন বিভাগে দ্বিতীয় হয়ে মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া ফিরলেন নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার বল্লভপাড়া গ্রামের অপু সাহা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৩
Share:

ফেরার পরে।—নিজস্ব চিত্র।

প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগেও জানতেন না, এশীয় স্তরে ‘স্ট্রেংথ লিফটিং’ প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন কি না। শেষ পর্যন্ত বর্ধমান পুলিশ, কাটোয়ার বিধায়ক ও ব্যবসায়ী সমিতির সহযোগিতায় ওই সব্জি ব্যবসায়ী উড়ে যান সৌদি আরবের বাহারিন। সেখান থেকে ১০৫ কেজি ভারোত্তালন বিভাগে দ্বিতীয় হয়ে মঙ্গলবার সকালে কাটোয়া ফিরলেন নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার বল্লভপাড়া গ্রামের অপু সাহা।

Advertisement

তবে খুশির দিনেও তাঁর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। নিজেই বললেন, “শুভান্যুধায়ীদের মাধ্যমে পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড় করেছিলাম। বাকি পঞ্চাশ হাজার টাকা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি। কাটোয়া স্টেশনে পা দিয়েই সেই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।” তাঁর স্ত্রী কালীদাসীদেবী বলেন, “এ নিয়ে আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এত বড় সুযোগের কথা ভেবে শেষ দিকে আর কিছু বলিনি। এখন কী ভাবে ওই টাকা শোধ হবে, সেটা ভাবতে হবে।”

অপুবাবুর বাড়ি নদিয়ার বল্লভপাড়া হলেও তিনি সব্জির ব্যবসা করেন কাটোয়া শহরের বড়বাজারে। সেখান থেকেই আনন্দ সঙ্ঘ নামে এক সংস্থায় ‘স্ট্রেংথ লিফ্টিং’ শিখতে যেতেন তিনি। অপুবাবু জানান, প্রতিদিন নৌকা করে কাটোয়া এসে ভোর পাঁচটা থেকে এক ঘন্টা আবার বিকেলে তিন ঘন্টা প্রশিক্ষণ নিতেন। মাঝের সময় মন দিতেন ব্যবসায়। ১৯৯৮ সাল থেকে আরুণি চন্দ্রের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ করেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে প্রতিযোগিতার আসরে নামেন। প্রথমে জেলা থেকে রাজ্যস্তরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে ২০১৪ সালে দেশীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় জেতেন। এরপরেই সুযোগ আসে সৌদি আরবে এশিয়া অ্যামেচার স্ট্রেংথ লিফ্টিং ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার। তিনি ছাড়াও বাংলা থেকে পাঁচজন-সহ গোটা দেশ থেকে ১৮ জন প্রতিযোগী ওই প্রতিযোগিতায় যোগ দেন। ভারতীয় দলের কোচ বাবুল বিকাশ পত্রনাম মঙ্গলবার বলেন, “আমাদের দেশ ওই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।” জানা গিয়েছে, কোন্নগরের রুপালী দাস ৮০ কেজি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন।

Advertisement

এ দিন কাটোয়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরেই আনন্দ সঙ্ঘ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যরা অপুবাবুকে সংবর্ধনা দেন। ঘাড়ে তুলে নাচানাচিও শুরু করেন। অপুবাবুর পরিজনেরাও হাজির ছিলেন সেখানে। আনন্দের মাঝেও অপুবাবু উদাস সুরে বলেন, “সরকার একটু মুখ তুলে তাকালে মহাজনের কাছ থেকে ঋণ করতে হতো না আমাদের মতো খেলোয়াড়দের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন